প্রোমোশন – প্রীতম চৌধুরী


– ” মা, ড্যাডি কখন আসবে ? আমি আর কতক্ষন আমার ফ্রেন্ডস দের ওয়েট করিয়ে রাখব ? They are eagerly waiting for me to cut the cake !”

বালিগঞ্জের নতুন ফ্ল্যাট এ আজ অয়ন আর রানির একমাত্র ছেলে তুতু-র পাঁচ বছরের জন্মদিনের পার্টি। তুতুর স্কুলের সব বন্ধুরা আর তাদের মা দের নেমন্তন্ন করেছে রানি। যত্ন করে ঘর সাজিয়েছে।
কিন্তু অয়ন যে সেই সাতসকালে এখনো ফেরার নাম নেই। সাড়ে আটটা বাজে। এই মুহূর্তেও যদি অফিস থেকে বেরোয়, তাহলে রাজারহাট থেকে গড়চা রোড আস্তে দেড় ঘন্টার কম না।

-” তুমি কেক টা কেটে ফেলো তুতু। ড্যাডি র আজ ফিরতে দেরি হবে। যাও আমি আসছি।

রাজারহাট এক বহুজাতিক সংস্থার ঝাঁ চকচকে বাড়ির কনফারেন্স রুমের বাইরে কাঁচের দেওয়ালের পাশে বসে আছে অয়ন। কিছুক্ষন আগে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। তাতে বাইরেটা আরও মায়াবী লাগছে। এ কোন কলকাতা ? এ তো সেই কলের শহর কলিকাতা নয়। হুতোম প্যাঁচার কলকেতা ও না। আর মহারানি ভিক্টোরিয়ার দ্বিতীয় শহর ও নয়। যে যেন এক অচেনা দেশের অচেনা আলোয় মোড়া কালো কালো বহুতলের সারির আড়ালে এক আকাশ-না-দেখতে-পাওয়া ক্লান্ত নগরী। একে কলকাতা বলে চলে না।

ভিতরের ঘরে আজ তার ভাগ্য নির্ধারণ হচ্ছে। ওদের কম্পানির ইস্টার্ন জোনের হেড হয়ে যাওয়া প্রায় পাকা অয়নের। আজ শুধু তার অফিশিয়াল কথাবার্তা হচ্ছে।
ছেলের জন্মদিন যে তার মনে নেই তা নয়, কিন্তু আজ কোনো মতেই বেরোনো সম্ভব না। কিছুক্ষণ আগে রানি অভিমানের গলায় ফোন করেছিল, কিন্তু কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি অয়ন।

অয়নের মনে পড়ছে, প্রথম চাকরি পেয়ে প্রায় নাটকের কায়দায় রানিকে টেলিফোন বুথ থেকে ফোন করে বলেছিল, “চাকরিটা আমি পায়ের গেছি রানি শুনছ !”
দুজনে খুব হেসেছিল ফোনে। তারপর বিয়ে, আরও বড় চাকরি, আরও আরও বড় চাকরি, সন্তান, এখন বালিগঞ্জের ফ্ল্যাট। আর দিনের শেষে নিভু আলোয় ড্রয়িং রুমে টুংটাং শব্দের সাথে স্কচ। এমনকি রানিকে অনেকদিন আদর করারও সময় পায়না। ছেলেকে নিয়ে কবে পড়তে বসিয়েছে মনে পড়েনা অয়নের। কারণ উইকেন্ড মানেই পার্টি। সুদীপ, ওর বস, অবিবাহিত। আর উইকেন্ড কাটাতে অয়নকেই চাই। সেও নেহাত ভদ্রতার খাতিরে না বলতে পারে না।

আইফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।
– ” হ্যালো ড্যাডি, আমার কেক কাটা হয়ে গেল। ডিনার করাও হয়ে গেল। তুমি কখন আসবে ? প্লিস তাড়াতাড়ি এস।”

কিছু বলার আগেই কনফারেন্স রুমের দরজা খুলে গেল। একে একে বেরিয়ে এলেন অয়নের বস, ওদের এশিয়া প্যাসিফিক জোনের হেড, বব ম্যাকমিলান।
– “Congratulations Mr. Mazumdar, Call me Bob from tomorrow! ”
সুদীপ বলল, ” তুই তো বাজিমাত করে দিলি ! আজ তো পার্টি করতেই হচ্ছে । Bob, you should know why Kolkata is the City of Joy indeed. Mazumdar will let you know tonight. “

ছেলের ফোনটা কাটেনি তখনও অয়ন। ওর প্রোমোশনটা হয়েই গেল।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.