মনের মধ্যে হঠাৎ বৃষ্টির রঙ গুলে দিল আকাশ ।পৃথিবী চুপ করে শুয়ে আছে,আকাশের মন খারাপ টাকে বুক জুড়ে আগলাচ্ছে।আকাশ আর পৃথিবী।সবুজ আর নীল, মাঝখানে এক সমুদ্র জীবন।
জীবনের সাথে জীবন গেঁথে ‘তারপরে’র জাল বুনে মানুষ বাঁচছে।মানুষের সাথে এই পৃথিবী; এই আদিগন্ত আকাশের সম্পর্ক বোধহয় সবচেয়ে মহৎ।কিন্তু আজ সময়ের খাঁচায় আকাশ ছোটো হয়েগেছে।দলতে দলতে ঘাসের গন্ধ সব ধুয়ে গেছে রনরক্তসফলতায়।
এক একটা দ্বীপের মত ভিড় ছুটছে। জন্ম !মানুষ কেবলই জন্ম নিচ্ছে আর জন্ম দিচ্ছে।জীবনের সুখ-দুঃখের অঙ্ক কষতে কষতে সময়ের নিয়মেই তারপর যবনিকা পতন।এই জন্ম-মৃত্যুর মাঝখানে বহু বন্দর পার করে মানুষ চলছে নির্দিষ্ট অভিসারে।সঞ্চয় করছে স্মৃতি অভিজ্ঞতা হাসিকান্না ।
বহু সম্পর্কের সিঁড়ি বেয়ে এগোচ্ছে জীবন।কিন্তু, সম্পর্ক না স্বার্থ! আজ একটা বড় প্রশ্ন ।বহু উত্তরের রিহার্সাল করেও যার কোনো মীমাংসাই হয় নি।
প্রাচীন কালে,ঐতিহাসিক যুগে মানুষ যখন বহু বিবর্তনের ফল হিসাবে জড় ও জীব জগতের সর্ব শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার হয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল প্রকৃতির রঙ্গমঞ্চে, তখন সে ছিল একা।তারপর, একে একে এসেছে নানা ধরনের গোষ্ঠীচেতনা।অস্তিত্বের সংকটেই মানুষ সমাজ গড়েছে।তবে এই সংকটের মূলেও ছিল সংগ্রাম।আর সংগ্রামের হাত ধরেই সভ্যতার জন্ম।তবুও তখন স্থানিক বিচ্ছিন্নতার মধ্যেও ঐক্য ছিল।তাই বোধহয় হোমার বা বাল্মীকি বা ব্যাসদেবের ভাবনাবিশ্বের কোথাও একটা যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায় ।কিন্তু, রাষ্ট্র চেতনা মানুষকে মানুষের শত্রু করেছিল সেই আদি যুগেও।অধিকার করার স্পৃহা, ক্ষমতার আস্ফালনের উল্লাস সব দিকে থেকেই মানুষ মানুষকে শত্রু ভেবেছিল ।
কিন্তু দেশ কাল সমাজ থেমে থাকে নি।আদিযুগেই মানুষের ভীতি থেকেই জন্ম নিয়েছিল ধর্ম ।আবার সেই ধর্মও স্থান কাল ভেদে সময়ের সাথেই আরও বহু মন্থনের মধ্যে বিবর্তিত হয়েছিল।মানুষের এই ধর্ম ভীরুতাকেই হাতিয়ার করে ক্ষমতাশালীরা হয়ে বসেছিল রাজা।সভ্যতার অভিধানে যুক্ত হয়েছিল আরও একটা শব্দ – সাম্রাজ্য ।এই সাম্রাজ্যের দ্বন্দ্বে পৃথিবীতে বহু সম্রাট এসেছে গেছে, কিন্তু মানুষের প্রগতিশীল মন প্রশ্ন হীন ভাবে মেনে নিতে চায় নি।আদি যুগ পার করে মধ্যযুগে সে প্রশ্ন তুলেছে,বিজ্ঞান কে বন্ধু হিসাবে পেয়েছে।বিপ্লব করেছে।সভ্যতা জেগে উঠেছে ।বিজ্ঞান মানুষকে পৌঁছে দিয়েছে আধুনিকতায় ।
মানুষের হাতে নতুন অস্ত্র তখন বিজ্ঞান ।সেই বিশেষ জ্ঞান কে কাজে লাগিয়েই মানুষ হদিশ পেয়েছে প্রযুক্তির এক নতুন জগতের।এই প্রযুক্তিই সভ্যতাকে আবার নতুন পথে চালিত করেছে।মানুষের বৃত্তি বদলে গিয়েছে হঠাৎই ।একদল মানুষের হাতে চলে গিয়েছে অর্থের ক্ষমতা, আরেক শ্রেনীর মানুষ হারিয়ে গিয়েছে বৈষম্যের অন্ধকারে ।সমাজে মুখ্য হয়েছে মানুষের অর্থনৈতিক পরিচয়।এর পরেই অর্থের ক্ষমতা বলেই মানুষ মানুষকে বঞ্চনা করতে শুরু করেছে।শাসক আর শোষিতের সম্পর্কে ঢুকে পরেছে অর্থনৈতিক বৈষম্য ।
একদিন বিজ্ঞান ধর্মকে রাস্তা ছাড়তে বলেছিল,সেই বিজ্ঞানই ভাড়াটে গুন্ডা হয়ে সভ্যতার বুকে বিশ্বযুদ্ধের গ্রহণ লাগিয়েছে।নাগরিক আধুনিকতা বোতাম টিপে ধ্বংস করে দিয়েছে শহর কে শহর,গ্রাম কে গ্রাম।মৃত্যুর উৎসব চলেছে সাম্রাজ্যবাদের পতাকা উড়িয়ে ।
মানুষ মানুষের থেকে আবার বিচ্ছিন্ন হয়েছে।প্রতি পদক্ষেপেই তখন তার ষড়যন্ত্র। সরীসৃপের থেকেও সে তখন ভয়ঙ্কর ।ভেঙে পড়েছে সমস্ত মূল্য বোধ।সম্পর্ক নীলাম হয়েছে স্বার্থের বাজারে ।আপনারা বলবেন,সম্পর্কের সাথে এই সবের আবার যোগ কোথায়?
আমি বলব,আছে। যেমন ভাবে বৈষম্যে মানুষ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে,তেমন ভাবেই প্রত্যেক সম্পর্কে আমরা হতে চাই নিউক্লিয়াস আর সম্পর্কের অপর প্রান্তের মানুষটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই ইলেকট্রনের মতোই।আর সেই কারণেই ঋণাত্মক-ধনাত্মক চাহিদা যোগানের চাপে সম্পর্কের পরিণতি তখন ভেন্টিলেশানে।যেখানে মৃত্যুর পরেও ডেথ সার্টিফিকেট মেলা দুষ্কর।নিয়ন্ত্রণ করতে চাওয়া আর নিয়ন্ত্রিত হওয়া,দুটোই আসলে আজকের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের যুগে দাঁড়িয়ে অন্তঃসার শূন্য ।
সম্পর্ক যেদিন সম্পর্কের সর্তকে অতিক্রম করে আকাশের অবকাশ টুকুকে ছুঁতে পারবে, সেদিন হয়তো আমরা মানুষ হয়ে মানুষের আশ্রয় হয়ে উঠতে পারবো ।তার জন্য দরকার পরবে না সম্পর্কের কোনো নির্দিষ্ট নাম।তাই সভ্যতার ভগ্ন উপত্যকায় দাঁড়িয়েও বলতে ইচ্ছে করে ‘ মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ ‘।আর সেই বিশ্বাসে নিঃশ্বাসের খুঁটি বেঁধেই আসুন আমরা মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াই।কারণ মানুষ বড়ো একলা,মানুষ বড়ো কাঁদছে – আসুন আমরা তার পাশে ভালোবেসে একটু দাঁড়াই।জানি, যদিও তা বহু শতাব্দীর মনীষীর সাধনা ,তবু আমরা এই জীবন সমুদ্রের একটুকরো ফেনা হয়ে আসুন অনন্ত রাত্রির বুকে সূর্যোদয়ের স্বপ্ন দেখি।যে স্বপ্নে সব ভালোরা বাসা বাঁধে ।
একটা পরম সত্যকে খুব সহজ আর সুন্দরভাবে উপস্থাপনা করেছে নিলিমেশ তার এই লেখায়। আমরা এই ধরনের লেখা আরো বেশি বেশি করে চাই
LikeLike