‘যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ’ – খুব প্রচলিত একটি প্রবাদ। কিন্তু কেন বলতে পারেন? কেন? রাবণ কে কেন সব সময় এমন ভাবে নেগেটিভ দেখানো হয়!আপনারা বলবেন, ওমা একজনের বৌকে চুরি করে নিয়ে গেল,তাকে কি সাধু পুরুষ বলবো?আচ্ছা ঠিকাছে, সাধু পুরুষ বলতে বলছি না।তবে একটা প্রশ্ন কি মনে জাগে না!রাবণ কেন এমন করলো?মনে আছে নিশ্চয়ই!যাক্, তাও আরেকবার মনে করিয়ে দি।
রাবণের বোন শূর্পনখা রূপ পরিবর্তন করে রাম কে বিয়ের প্রস্তাব দিতে গিয়েছিল।রাম কি করলো; তাকে বলল যে,সে বিবাহিত – তাই শূর্পনখা বরং লক্ষ্মণ কে গিয়ে বলুক।তা শুনে সরল মনে শূর্পনখা তাই করলো।কিন্তু পরিণতি তে তার নাক কাটা গেল।আচ্ছা, এবার ভাবুন তো নাক কাটা যাওয়া মানে কি?ও ভাবতে চাইছেন না!আমিই বলছি,তখন সেখানে শূর্পনখার সম্মান কে ভূলুণ্ঠিত করা হয়ছিল – আর যেটা বলতে পারলাম না,সেটা নিশ্চই বুঝতেই পারছেন।এরপর শূর্পনখা গিয়ে সব জানালো দাদা রাবণ কে।বোনের এ হেন অপমানে ক্ষিপ্ত রাক্ষসরাজ করলো কি; রামের বৌ সীতা কে কিডন্যাপ করে আনলো।আচ্ছা রাবণ কি খুব ভুল করেছিল?তবে কেন বারবার রাবণ কেই ভিলেন করে দেওয়া হয়,বলতে পারেন?
তেমনই আজও ভারতীয় রাজনীতিতেও বলা হয়ে থাকে,যার হাতে ক্ষমতা যায়,সেইই রাবণের মতো হয়ে যায়।আচ্ছা আর একবার ভাবতে অনুরোধ করবো, রামায়ণের যুদ্ধে ক্ষমতা টা ঠিক কাদের হাতে ছিল?রাবণ না রাম?আর যদি তর্কের খাতিরে এই প্রবাদ টা মেনেও নি তাহলে বিপরীতে একথাও বলা যায় যে রাবণ কে হারিয়ে লঙ্কায় কে গেছিল?রাম!অর্থাৎ রামের ক্ষেত্রেও এ প্রবাদ প্রযোজ্য হবে।কি তাই তো?
আপনারা বোধহয় খুব বিরক্ত বোধ করছেন।পবিত্র রামায়ণ নিয়ে,ভগবান রঘুপতি রাঘব রাজা রাম কে নিয়ে এসব কেই বা শুনতে চায়।আসলে আমি রামের এই পরিচয় গুলো দিচ্ছি এই কারণে যে,এই রামেরই যারা ভক্ত,তারা আজ আমার আপনার ভারত আমার আপনার বাংলায় একই ভাবে লঙ্কা কান্ড করে চলেছে।আর আমরা কি করছি রাজনৈতিক কোন্দল করে সময় কাটাচ্ছি।
গত কালই আমার আপনার শহর কলকাতা তে যে জঘন্য ঘটনা টি ঘটে গেছে।সে যে দলই করে থাকুক তা অত্যন্ত নিন্দার।কারণ,যদি ধরে নেওয়া যায় যে যারা এই কাজ করেছে তারা এই বাংলারই মানুষ!তবে কেমন করে তারা পারলো সেই মানুষটির মূর্তি কে এই ভাবে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিতে?যে বিদ্যাসাগর না থাকলে এই যে আমি আজ লিখছি,সেটাই সম্ভব হতো না।স্ত্রী শিক্ষা হয়তো আরও বহু যুগ পিছিয়ে যেতো।বিধবারা থেকে যেত অত্যাচারের অন্ধকারে!এমনকি যখন তিনি বিধবা বিবাহের প্রচলন করছেন তখন তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হলেও যিনি থেমে থাকেন নি।সেই মানুষটির মূর্তির গায়ে হাত দিতেও তাদের হাত কাঁপলো না?তবে কি একাজ কোনো বাহ্যিক প্রভাব থেকে ঘটেছে তাহলে তো মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাথে গলা মিলিয় একটা কথাই বলতে হয়,
‘নিজগৃহপথ, তাত, দেখাও তস্করে?
চন্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে?’
তাই সকলে দয়া করে ভাবুন,কারণ আবার ভাবার সময় এসেছে।আমাদের চারিদিকে এখন শেয়াল শকুন – প্লিজ ভাবুন,একটু ভাবুন!
Excellent! I will be sharing.
LikeLike