এক নিরালা রুপালি রাতের কথা – অমিত গুহ

আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে – পূজা-বিরহ

(শমীন্দ্রনাথ মারা গেছেন ১৯০৭ এ আর যতদূর দেখলাম এই গানের জন্ম ১৯১৪ এ তাই পুত্র শোক ই যে এই গানের জন্ম দিচ্ছে এমন টা ঠিক বলা যায় না।)

কি অদ্ভুত, জ্যোৎস্না রাতে যে সবাই  বনে যায়, সবাই যে বনেই গেছে। কেনো গেছে? সবাই কি সেই চোখ নিয়েই ছিল যারা জ্যোৎস্না দেখতে পায়?  চন্দ্রলোকের অদ্ভুত মায়ায় যখন তোলপাড় হয় বনপ্রান্তর তখন ঘরে বসে থাকা যায় না। কিন্তু কারা গেলো জ্যোৎস্না দেখতে? তারাই গেলো যাদের চোখে জ্যোৎস্না দেখা দেয় অরূপ হয়ে. কখন গেল তারা? সেই সময় যখন বসন্ত সমীর মাতাল হয়। মাতাল সমীর মানে কি? মাতাল অর্থে ধরি এমন কিছু যাকে কোন ভাবেই স্বাভাবিক ছন্দে বাধা যাচ্ছে না। সে মাতলামি করছে নিজেকে ধরে না রেখে? এমন টাই কি হয়েছিল সেদিন রাতে?  কিন্তু তবু আমি যাইনি বনে। কেনো যাইনি? ঘরে থাকতে চেয়েছি আমি, নিরালা ঘরে। তাও কোন এক অদ্ভুত কোণে। যাকে আমার নিজের বলে মনে হয়। কেনো থাকতে চাইলাম এমন কোণে? যাতে বাইরে থেকে কোন আলো কোন হাওয়া এসে আমায় নাড়িয়ে না দিয়ে যায়। যাবো না এই মাতাল সমীরণে তার মানে এই সমীরন ই কি নিয়ে আসছে এমন কোন বার্তা যা আমায় অন্য কোথাও যেতে দেয় না ? কারন কি? এই পর্যন্ত এসে বোঝা যায় কি অদ্ভুত অন্ধকার ঘিরে ধরছে এই গানের আমি কে। যেন সবটুকু শেষ হয়ে আসছে আমার।



অন্তরা পেরিয়ে প্রবেশ করছি সঞ্চারীতে। ঠিক যেন গানের এক ঘর থেকে অন্য ঘরে। এখানে আমি বলছি আমার এ ঘর বহু যতন করে ধুতে হবে মুছতে হবে মোরে। এতক্ষনের অন্ধকার কাটিয়ে আমি আশা দেখছি যেন অন্ধকারে, তাই আমি উঠে বসছি, ঘর গুছাচ্ছি। কোন ঘর?  যে ঘরে নিরালায় বসে ছিলাম আমি? নাকি আমার মনের ভিতরের সেই ঘর যেখানে তার যাতায়াত ছিল? আমার এমন অন্ধকার সে মানতে পারবে কেন? তাই কি আমি তা ধুয়ে মেজে পরিষ্কার করতে চাইছি? গানের সুর এমন খরজ পর্দায় এসে পৌঁছালো ঠিক যেন এই দুটো লাইন আমার মনের ভিতরের কথা বলছে। যে কথা তার পর্দায় গেলে প্রকাশ হয়ে পরবে শ্রবনে। এ কথা আমার অন্তরের শপথ।

আমারে যে জাগতে হবে কি জানি সে আসবে কবে। সঞ্চারীর শেষ পর্দা মধ্য সপ্তকের গা, আর দিত্বীয় অন্তরার শুরুর সুর পা। পা নি সা এক এক করে খরজ  এর থেকে বেরিয়ে এসে মধ্য পেরিয়ে  গান আবার আসতে থাকে তার পুরানো স্বরস্থানে। ঠিক সেই পর্দায় যেখানে আমি বলেছিলাম যাবো না গো যাবো না যে। কিন্তু এবার বলছি আমারে যে জাগতে হবে। এখানে গানের সুরের এমন উত্তরণ মনে হয় এতোক্ষনের বসে থাকা আমি এবার আমার অন্তরের শপথ কে ভর করে উঠে দাঁড়াচ্ছি কোন আলোর দিকে। যে পর্দায় নিরাশা এসেছিলো সেই পর্দা দিয়েই শুরু করছি আমার নতুন ভাবনা। আমার আশা, আলো। আমায় কেন জগতে হবে কারণ সে আসবে হয়তো কোনদিন। তাই প্রতি রাতেই আমি হয়তো জাগি বা জাগবো। তার পর গানের শেষ দুটো লাইন যদি আমায় পড়ে তাহার মনে বসন্তের এই মাতাল সমীরণে। এই অদ্ভুত আশা নির্ভর করছে এক যদির উপর। সে কোন ভাবে আমায় যদি মনে করে ফেলে। শেষ লাইন বসন্তের এই মাতাল সমীরণে তার মানে কি এই বসন্তের মাতাল সমীর এই হল এই গানের প্রাণ? এই মাতাল সমীরে যেমন আমি যেতে পারিনি কোন জ্যোৎস্নাময়  বনে তেমনি এই আশা তেও বুক বেঁধেছি সে আসতে পারে আমার কাছে। এই বসন্ত সমীর ই তাহলে সেই যোগসূত্র যা জুড়ে দিচ্ছে কোন একদিনের স্মৃতি, আজ আর আমার ভবিষ্যৎ কোন একদিনের আকাঙ্খা কে। অর্থাৎ সময়ের হিসাবে তিন কাল বা তিন ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকছে ওই বসন্ত সমীরের উপর। কিন্তু কার জন্য এই কালাতিপাত? কোন মানব বা মানবী কি এই অদ্ভুত বসন্ত সমীরের গন্ধে বিভোর হয়ে ছুঁতে আসবে আমায় নাকি আমি অপেক্ষা করছি এমন কোন প্রাণের জন্য যা অতিক্রম করেছে জগতের যে কোন জ্যোৎস্নালোকিত সৌন্দর্য? প্রাণের সাথে প্রাণের এই টান কখন অদ্ভুত মোহে নিয়ে আসবে সেই স্মৃতি, কোন এক বসন্তের মাতাল সমীরণের স্মৃতি।

One Comment Add yours

  1. সুমিত মিত্র says:

    এই লেখায় ? এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার লক্ষনীয়

    Like

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.