মূল রচনা : Robert Browning
সন্ধ্যা হতেই বৃষ্টি এলোমেলো
নদীর ঢেউ আজ উঠছে যেন জেগে
গাছের পাতা উথালপাথাল, মন
চমকে ওঠে দম্কা বাতাস লেগে।
দেওয়াল জোড়া আলোছায়ার খেলা,
ঘরের ভিতর শব্দবিহীন ক্ষণ,
বুকের মধ্যে দাপিয়ে বেড়ায় ঝড়,
আশা-নিরাশায় দোদুল্যমান মন।
ঘরের কোণে একলা আমি বসে
অন্ধকারে প্রহর গুনি তার।
হঠাৎ করে – এলো কি সে তবে?
শেষ হলো কি অধীর অপেক্ষা?
দরজা খুলে রাখলো ঘরে পা –
বাইরে কাঁদে বৃষ্টিভেজা রাত,
চোখে আমার চাইলো অনিমেষে –
আঁধার কেটে উঠলো বুঝি চাঁদ!
ভেজা চাদর গায়ের থেকে খুলে
সিক্ত খোপা খুলল আল্গা টানে,
কালো চুলের বাদল নামিয়ে সে
দেখলো আমায় তীব্র অভিমানে।
ডাকলো আমায় আদর ভরা স্বরে,
ভালোবাসার আবেশ ঘন ক্ষণে,
সুতনূকা – বসলো আমার পাশে,
ঘিরলো আমায় গভীর আলিঙ্গনে।
আমার প্রেমে জড়িয়ে আছে যে সে –
লতা যেমন গলার কন্ঠহার
বনস্পতির; কিন্তু হঠাৎ আজ
বেসুর বাজে, ছিঁড়লো যেন তার।
সুতনূকা – বড়োই সে দুর্বল,
জানে না সে শক্তি ভালোবাসার!
আমার কাছে ধরা দেবে কি সে
ত্যাগ করে তার তুচ্ছ অহংকার?
হবে কি সে আমারই চিরদিন?
চিরস্থায়ী হবে কি এই রাত?
ছিঁড়বে কি সে বাঁধন আছে যত?
রাখবে এসে আমার হাতে হাত?
এই তো সে আজ, একলা ঝড়ের রাতে,
জানি, আমি গভীর ভাবে জানি,
এসেছে সে আজকে আমার কাছে –
কিন্তু তার কারণ কেবল আমি!
সুতনুকা আমার পুজো করে –
জানি, আমি দেবতা তার কাছে,
হৃদয় আমার উঠেছে আজ ভরে,
সে আমারই – আমারই শুধু যে সে।
এখন তবে কি করবো আমি?
মনের মধ্যে ভাবনা ঘিরে আসে।
জানি আমি কি আজ করতে হবে,
এই তো সুতনুকা আমার পাশে।
ভরে আছে হৃদয় আমার আজ,
হঠাৎ যেন এলাম স্বপ্ন-দেশে,
কন্ঠ তারই তিনটি পাকে বেঁধে
গভীর ঘন তারই অলক ফাঁসে
জড়াই ক্রমে। কিন্তু আমি জানি
যন্ত্রণা তার ছাপ ফেলেনি মুখে।
আমার কোলেই লুটিয়ে সুতনুকা
মাথাটি তার রেখেছে আমার বুকে।
পাঁপড়ি যেমন নিজের আবরণের
পুস্পরেণু হঠাৎ করে বার,
চোখের পাতা আলগা টানে খুলি –
নীল দু’চোখে জড়িয়ে হাসি তার।
কেশের রাশি আলগা করি ক্রমে,
মুক্ত করি কন্ঠ থেকে তার
হাসিতে তার ফিরলো যেন রঙ –
অধর স্পর্শ করি সুতনূকার।
আগের মতোই আলিঙ্গনে টানি,
আমার কাঁধেই এলায় মাথা যে সে,
ভালোবাসার গ্রন্থিতে দুজনার
চিরকালে পড়লো বাঁধা প্রেম।
সুতনূকার প্রেম! সে কি জানে
স্বপ্ন তবে সত্যি হলো তার।
সারারাত্রী দুজনে স্থির বসে –
দেবতারাও ভাঙেনি নীরবতা।