চলচ্চিত্র সমালোচনা : মিশন মঙ্গল – তমাল গোস্বামী

একটা সত্য ঘটনা নিয়ে ছবি কিংবা কোনো বায়োপিক কিংবা কোনো স্পোর্টস মুভি করার সময় এই কথাটা মাথায় রাখতে হয় যে প্রথম থেকেই ছবির ক্লাইমেক্সটা মোটামুটি দর্শকের জানা থাকে। আর এই জানা গল্পকে দিয়ে একটা সফল ছবি তখনই বানানো যায় যখন সেই ছবির চিত্রনাট্য জোরদার হয়। এই ফর্মুলায় চলে অতীতে বহু ছবি পর্দায় দাপিয়ে বেরিয়েছে, তার মধ্যে বাংলায় “কোনি”, হিন্দিতে “লাগান” কিংবা কিছুদিন আগে রিলিজ হওয়া “উড়ি” র কথা বলা যায়। আর সেই ফর্মুলাতেই ভর দিয়ে গত সপ্তাহে স্বাধীনতা দিবস আর রাখি উৎসবের সম্মিলিত দিনে পরিচালক জাগন শক্তির ছবি “মিশন মঙ্গল” রিলিজ করেছে। প্রথম দিনেই এই ছবি বক্স অফিসে বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়ে এসেছে। আর এখন দ্বিতীয় সপ্তাহেও রমরম করে চলছে মিশন মঙ্গল।

© Bookmyshow


সারা পৃথিবীতে “নাসা” এবং তার কাজকর্ম এতটাই প্রচারের আলোতে উজ্বল যে আমরা অনেকেই আমাদের দেশিয় সংস্থা “ইসরো”র কথা প্রায় জানিই না। এই ইসরোরই এক বিজ্ঞানী রাকেশ ধাওয়ান আর তার টিম মিলে 1994 সালের 24সে সেপ্টেম্বর, প্রথম বারের চেষ্টাতেই তাদের তৈরি স্যাটেলাইট মঙ্গলের অরবিটে পৌঁছতে সফল হন। তবে এই কাজটা খুব একটা সহজ ছিল না। চন্দ্রযান এর অসফলতার অভিজ্ঞতা, বাজেটের অভাব, টেকনিক্যাল হ্যাজার্ড সব কিছুকে ছাপিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করার যে রূপকথা সেই গল্পই বলিকি আর তার টিম লিখেছেন। আর পর্দায় সেই গল্পকে সুন্দর ভাবে রূপ দিয়েছেন পরিচালক জাগন শক্তি।


অভিনয়ের দিক থেকে অক্ষয় কুমার যদি এই ছবির প্রাণ হয় বিদ্যা বালান এই ছবির প্রাণশক্তি। দুজন মিলে এই ছবিকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছেন। আর ওদের সাথে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছে সোনাক্ষী, তাপসী, কীর্তি, নিত্য মেনন, সারমান জোসি, এইচ জি দত্তাত্রেয়া। রকেট সাইন্স এর মতন এক জটিল সাবজেক্টকে, হোম সাইন্স এর মতন সহজ সরল ভাষায় সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরার মধ্যে দিয়েই এই ছবির সার্থকতা। রবি বর্মন এর ক্যামেরা এই ছবিকে এক ঝকঝকে লুক দিয়েছে। আর ভিএফএক্স এর সুন্দর ব্যবহার সমস্ত বিষয়টার সাথে দর্শককে রিলেট করতে সহায়তা করেছে।
তবে একেবারে যে কোনো খামতি নেই এই ছবিতে সেটা বলবো না। কিছু কিছু জায়গায় কমেডি গুলো বড্ড স্থূল। আর সাইন্টিস্টদের হটাৎ করে ঝাটা হাতে নাচ না দিলেও ছবিটা ভালো করেই উতরে যেত।
আপনাদের বলছি, ছবিটা যদি এখনো না দেখে থাকেন তবে এই বেলা দেখে ফেলুন। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কখনো টেনশন, কখনো কমেডি, কখনো হতাশা আবার কখনো সফলতার মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে কখন যে নিজের এই পোড়া দেশটার জন্য গর্বিত হয়ে উঠবেন বুঝতেই পারবেন না।
আমার রেটিং : ৩.৫/৫