উৎসব!
শব্দটা শুনলেই আকাশটা কেমন পাট ভাঙা নীল ঢাকাই জামদানীর ঢালা জমির মতো হয়ে ওঠে!মেঘ গুলো যেন পরীক্ষা শেষের ছেলেরদলের মতো বেরিয়ে পড়ে!শিউলি ফুল স্বপ্ন দেখায়;এবার হয়তো সে ফিরবে – যার কথা মনে পড়ে গেলে, অফিস ফেরার পথের একলা সময় টুকুনি তে গলার কাছটা আজও ব্যথা করে! কাশবন সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দেওয়া শিশুর আবদারের মতো হাওয়ার শরীর জড়িয়ে ধরে।চেনা রাস্তা গুলোকেও ঝকমারি আলোর সাজে তখন অচেনা লাগে।
আমাদের কাছে উৎসব মানেই হলো এই শরতের বেশ কিছু চেনা ছবির একটা কোলাজ।
তবে এই শরতে সামিউল ইসলাম পোলকও ঢাকায় বসে চন্ডী পাঠ করেন।ইছামতীর দুই তীরে হিন্দু বা মুসলমান আর বাঙাল বা ঘটি নয় – মানুষ দাঁড়িয়ে ভাসান দেখে।
সত্যিই এই উৎসবের কি কোনো ধর্ম আছে – উৎসবের তো কেবল একটাই ধর্ম; আনন্দ।
তবে আজ সেই আনন্দটাও কেমন যেন বদলে গেছে।
আচ্ছা আনন্দ কি কেবলই সব ভুলে, নিজেকে নিয়ে দু’হাত তুলে নেচে বেড়ানো?সে আনন্দ তো আত্ম বিস্মৃতির।নিজেকেই ছড়িয়ে ফেলা।দুঃখও তো মানুষ কে আনন্দই দেয় – দেয় না কি?নবমীর রাতের মেনকার দুঃখ যখন আমাদের বুকে প্রতিধ্বনিত হয় তখন!তখন কি সেই দুঃখের মধ্যেও আনন্দ থাকে না?
তবে সুখ দুঃখের এই হিসাব গুলো সব স্থান কাল পাত্রে, ঠিক সমান নয়।বিজ্ঞানী তো বলেই গেছেন, সব আপেক্ষিক।তাই উৎসবও খুব আপেক্ষিক।
আচ্ছা ধরুন আপনার পাড়ার প্যান্ডেলে যে ঢাকি রা এসেছে ; তাদের গ্রামের পুজোটায় কি একটা ঢাকেও কাঠি পড়বে!বা ওর ঘরের বাচ্চা মেয়েটি যখন চুলে নতুন ফিতে বেঁধে এবচ্ছরের মায়ের সেলাই করে দেওয়া একমাত্র নতুন জঙ্গলা প্রিন্টের ফ্রকটা পরে চোখে বেশ মোটা করে কাজল লাগিয়ে বাবার জন্য অপেক্ষা করেবে,তখন হয়তো দশমীটাই ফুরিয়ে যাবে।
সেই রকমই কত অজানা গল্প লেখে প্রত্যেকটা উৎসব।আমরা শুধুই আলোটা দেখি।পিলসুজটা সব সময়ই অন্ধকারে মুখ ঢেকে পড়ে থাকে।
যেখানে মাথার উপরে ছাদ নেই।সেখানও উৎসব তাই ভাঙা আয়নায় মুখ দেখে।মহলয়ার আগে যে প্যান্ডলে ঠাকুর এসে যায় – সেখানে ত্রিপলের ফাঁকফোকরে মুখ বাড়িয়ে ঝলমলে চোখ গুলো দু’বেলা দু’মুঠোর নিশ্চয়তা না থাকলেও, উৎসবেরই দিন গোনে।সেখানে জামা জুতো হিসাব নেই।দামী রেস্তোঁরার লাইন নেই।সুরুচি চেতলার লড়াই নেই।আছে শুধুই আনন্দ।সেটাই তো উৎসব।মানুষের উৎসব।