“Gar firdaus bar-rue zamin ast, hami asto, hamin asto, hamin ast.”
“If there is a heaven on earth, it’s here, it’s here, it’s here. ”
Mughal Emperor Jehangir said it all when he visited Kashmir in the 17th century.
সম্রাট জাহাঙ্গীর কাশ্মীর সম্পর্কে যা বলেছেন তা যে শতকরা ১০০ শতাংশ সত্যি সেটা বুঝতে গেলে আপনাকে পা রাখতেই হবে কাশ্মীরি উপত্যকায়,মিশে যেতে হবে সেখানকার মানুষদের সঙ্গে।
কি ভয় করছে তো?
বাড়িতে বসে টিভি তে যখন কাশ্মীর নিয়ে একের পর এক খবর দেখেন বা ৩৭০ ধারা উঠে যাওয়া নিয়ে চায়ের আড্ডায় জ্বালাময় বক্তৃতা দেন তখন কোথায় থাকে আপনাদের ভয়?
কাশ্মীর যাওয়ার প্রসঙ্গ উঠলেই আমরা বলে উঠি “যাওয়া টা কি safe হবে?” “কি দরকার এই ঝামেলার মধ্যে যাওয়ার,বেড়াতে যাওয়ার কি আর জায়গা নেই,শিমলা যাও মানালি যাও কিম্বা হরিদ্বার”
আচ্ছা কখনো ভেবেছেন যে মানুষ গুলো ওখানে থাকে তারা কিভাবে রয়েছে ওখানে,না!!! ভেবে কি হবে আমাদের মাংসে নুন আর ফেইসবুকে একটু স্ট্যাটাস দিয়েই আমরা খুশি।
সত্যি কথা বলতে কি এবার কাশ্মীর যাওয়ার আগে আমার মনে এই ভয় গুলো থাকলেও খালি ভাবছিলাম তারিক ভাই থাকলে চিন্তা নেই তাই পৌঁছনোর আগে থেকেই তারিক ভাই এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলাম। তারিক ভাই একজন কাশ্মীরি যিনি প্রতি বছর কলকাতায় আসেন কাশ্মীরি শালের পসরা সাজিয়ে। কাশ্মীরে গিয়ে যাতে আমরা কোনো সমস্যায় পড়লে ওনাকে যোগাযোগ করি তাই একটা ল্যান্ড লাইন নম্বর দিয়েছিলেন।অবাক হচ্ছেন তো মোবাইলের যুগে ল্যান্ড লাইন? হ্যাঁ গত ৭০ দিন ধরে কাশ্মীর এ ইন্টারনেট মোবাইল পরিসেবা বন্ধ।যোগাযোগ এর জন্যে ল্যান্ডলাইন ই ভরসা। লেহ থেকে যখন শ্রীনগর যাওয়া ঠিক হলো তারিক ভাই এর ল্যান্ডলাইন এ বহুবার ফোন করেও তার সাথে যোগাযোগ করা গেলনা।কারণ উনি যে নম্বর টা দিয়েছিলেন সেটা ওনার দোকানের।ওখানে পৌঁছে জানলাম সব দোকানপাট বন্ধ।
একরাশ চিন্তা নিয়ে কাশ্মীরে পৌঁছে আমরা নিজেদের পছন্দসই জায়গায় একটা houseboat খুঁজছিলাম ডাল লেক এ।এক শিকারা চালক আমাদের বললেন গত ৭০ দিন ধরে টুরিস্ট নেই কাশ্মীরে তাই সব ভালো ভালো হাউসবোট খালি পড়ে আছে উনি আমাদের সেরকম একটি হাউসেবোটে পৌঁছে দিলেন।বললেন যদি পছন্দ না হয় আরো কয়েকটি তে নিয়ে যাবেন।তবে প্রথম যে হউসবোট টিতে নিয়ে গেলেন সেটি আমাদের খুব পছন্দ হয়ে গেলো।houseboat এর মালিক ও খুব খুশি আমরা ৩ দিন থাকবো শুনে।

Houseboat এর নাম Dongola palace।
খাওয়া দাওয়া সহ বেশ কম রেটে ই রাজি হয়ে গেলেন ভদ্রলোক। আমাদের আশঙ্কার কথা শুনে বললেন ” টুরিস্ট আমাদের কাছে ভগবান আপনারা এলে তবেই আমাদের রোজগার আপনাদের কোনো বিপদ হবে না এটা নিজের বাড়ি মনে করে থাকুন আপনারা” যে যে জায়গায় যাওয়া সম্ভব সেই জায়গায় যাওয়ার গাড়ি ওনারা ঠিক করে দিলেন।বাড়িতে যোগাযোগের জন্যে ওনাদের ল্যান্ডলাইন ব্যবহার করতে বললেন।
সত্যি যে তিনদিন আমরা ছিলাম বাড়ির থেকে আলাদা কিছু মনে হয়েনি আমাদের,মালিকের দুই নাতনি জাসমিন (৩ বছর) আর শারমিন (৯ বছর) আমার সঙ্গী হয়ে গেছিলো।আমার লম্বা চুলে বেণী বাঁধা থেকে একসঙ্গে কত্ত গল্প এমনকি ওদের রান্না ঘরে গিয়ে আলুভাজা ডাল বানানো সবেতেই এত আন্তরিকতার ছোঁয়া আর কখনো পেয়েছি কিনা জানিনা।কথায় কথায় জানলাম বাচ্চা গুলোও স্কুলে যায়না আজ দু মাস ধরে,স্কুল বন্ধ তাই পড়াশোনাও।তারা শুধু জানে যে “হালাত ঠিক নেহি হ্যায় ইসলিয়ে বন্ধ হ্যায়”।এই ভাবে একটা জেনারেশন এর পড়াশুনো বন্ধ করে যে কার কি লাভ হতে পারে আমার মত স্থূল বুদ্ধির লোকের পক্ষে তা জানা অসম্ভব।একেই বোধহয় বলে “collateral damage” ওদের থেকে জানলাম স্কুল খুলেই ওদের পরীক্ষা তাই ঢেঁকির স্বর্গে গিয়ে ধান ভাঙ্গার প্রবাদ কে সত্যি করে আমিও ভূস্বর্গ এ গিয়ে নিজের ভিতরের শিক্ষক স্বত্তা কে অস্বীকার করতে পারলাম না।দিলাম আমার ভাঙ্গা হিন্দিতে gravitation force আর অঙ্কের ঐকিক নিয়মের পাঠ পড়িয়ে।

শর্ত হলো আমি ওদের পড়াবো আর ওরা আমার চুলে বেণী বাঁধবে।
কখন কিভাবে যে ওই কাশ্মীরি পরিবারের সাথে একাত্ম হয়ে উঠলাম বুঝতে পারিনি।
ফিরে আসার দিনও ভোর বেলা উঠে ওনারা নিজেদের গাড়িতে আমাদের পৌঁছে দিলেন AIRPORT এ।
যে তিনদিন আমরা কাশ্মীর এ ছিলাম এত শান্তি আর স্বস্তি আমি আর কোথাও থাকলে পেতাম কিনা জানিনা।
রোজ বিকেলে শিকারা ভ্রমণ,কাশ্মীরি ফেরিওয়ালা দের আর্তি”দিদি কুছ ছোটা লে লিজিয়ে” ৭০ দিন ধরে বসে থাকা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ গুলোর অবস্থা আমাকে অনেক দিন ভাবাবে।হয়ত কিছুই করতে পারবো না ওদের জন্যে তবে বার বার কাশ্মীরে ফিরে যাওয়ার সাহস রাখবো।

পরের বার বাড়িতে বসে যখন টিভি তে কাশ্মীরের খবর দেখবো তখন মনে পড়বে ওদের নিষ্পাপ মুখ গুলো যারা জানেই না ৩৭০ কি বা emergency কাকে বলে।ওরা শুধু বসে আছে কবে হালাত ঠিক হবে সেই আশায়।আমি ভগবান আল্লাহ এর কাছে এই প্রার্থনা করি যেনো কাশ্মীরের হালাত ঠিক হয় ওরা ভালো থাকে।আমরাও যেনো নিশ্চিন্তে বার বার ফিরে যেতে পারি জান্নাত এ কাশ্মীরে।।
