বাংলার মন্দিরে কুঁড়েঘরের আদল – সমীপেষু দাস

সুজলা-সুফলা  বাংলার  ঘরে-ঘরে  উৎসবের  আমোদ  রীতিম’ত  বাঙালিবিলাসের  দিনপঞ্জি। এই উৎসব  আসে  বছরের  প্রতি  পদে পদে। পুজো-পার্বণের  সঙ্গেই  শীলমোহরে  খোদিত  বাঙালির  আরাধ্য  দেবদেবীরা। বাংলা ও বাঙালির লোকদেবতা ষষ্ঠী, গাজীপীর, ঘেঁটু, ধর্মঠাকুর, ওলাইচণ্ডীরা ছায়াঘেরা বৃদ্ধ বনস্পতির কোলেই আশ্রয় পেলেও পৌরাণিক দেবতা শিব, দুর্গা, কালী, রাধাকৃষ্ণ চিরদিনই প্রতিষ্ঠিত দেবালয়ে স্থান পেয়েছে। যেহেতু বাঙালি আবেগের দাস, তাই নিজের থেকে আলাদাভাবে ভাবতে পারেনি দেবতাদের। তাই নিজে যেমনভাবে বাস করে, তেমনই ঠাকুর-দেবতাদের বাসস্থানকেও সাজিয়েছে।

                 ঐতিহাসিকদের মতানুসারে বাংলার যুগবিভাগে তিনটি ধাপ এসেছে- আদি, মধ্য ও আধুনিক। আদি যুগের নিদর্শন  ১৩শ শতকের প্রথমেই বখতিয়ার খিলজির নবদ্বীপ ও গৌড়ে আক্রমণের সময়েই নষ্ট হয়ে যায়। যেটুকুকে আমরা এখনও পর্যন্ত বাংলার নিজস্ব শিল্পরীতি হিসেবেই দাবি করতে পারি, তা প্রায়ই মধ্যযুগের অর্থাৎ ১৩শ শতক ও তার পরবর্তী সময়ের। এই সময়কার বাংলার কোলে যে মন্দির-মসজিদ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, সেখানে গড়ে উঠেছে আরেক বাংলা। গ্রামবাংলার যে রূপসীয়ানা, তাতে চোখের সামনেই ভেসে ওঠে সারি সারি কুঁড়েঘর, তাল-বট-খেজুর গাছ, ধানের গোলা, উঠোনে খড়িমাটির লক্ষ্মীর পায়ের আলপনা।

                সারা ভারতে তিন ধরণের মন্দিরশৈলী রয়েছে- নাগর ( উত্তর ও পূর্ব ভারত ), বেসর ( পশ্চিম ভারত ) ও দ্রাবিড় ( দক্ষিণ ভারত )। কিন্তু বাংলায় মধ্যযুগে যে মন্দিরের ধাঁচ দেখা দিয়েছিল, তা এই তিন রীতি থেকে বেরিয়ে আসা এক নতুন ঘরানা। খড়ের ছাউনি দিয়ে ঢাকা কাদামাটির কুঁড়েঘরের যেন শিল্পমাফিক এক  replica । উড়িষ্যার  দেউল মন্দিরের কথা আমরা সবাই জানি। বাংলাতেও প্রথমদিকে এই দেউল মন্দিরের  সংখ্যাই বেশি  ছিল।  এর মধ্যে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার জটার দেউল আজও সাক্ষী হয়ে আছে। তবে  মহাপ্রভুর অন্তর্ধানের সাথে সাথেই  বাংলায়  গৌড়ীয়  বৈষ্ণবধর্ম  মাথাচাড়া  দিয়ে  উঠলে  সেই  ধর্মকে  টিকিয়ে  রাখতে  ও  রাজনৈতিক  সুবাদে  ভাগীরথীর  পশ্চিম  পাড়ে  যাকে কিনা  বলা হয়  রাঢ়  বাংলা;   সেখানেই গড়ে উঠল এক নতুন  কাঠামো – ‘চালা’ রীতি।

                                                          চারচালা কুঁড়েঘর  ( রামকেলি, মালদহ  )

                                             ‘চালা’ নাম শুনেই বোঝা যায় যে চাল ( ছাউনি ) শব্দ থেকে এর আমদানি। সেকালে  এই চালা রীতির মন্দির বাংলায়  অজস্র গড়ে উঠলেও তার মধ্যে কিছু প্রকারভেদ ছিল। এখনও গ্রামাঞ্চলে  যেমন  কোঠাবাড়ি  বা  মাটিরই তৈরি  দোতলা বাড়ি দেখা যায়, তেমনই  দোচালা, চারচালা, আটচালা, বারোচালা এই  সব ধরণেরই  আঙ্গিক  বাংলার  মন্দিরে  দেখা  দিয়েছে।  যদিও ডঃ  সুকুমার  সেন  জানিয়েছেন  যে  উত্তরপ্রদেশের  গোরক্ষপুরের  কাছেই  সোহগৌড়া  গ্রামে  একখানি  তাম্রপট্টলেখ  পাওয়া  গেছে  যার  সময়কাল  আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব   তৃতীয়  শতক, সেখানে  বাঁশের  খুঁটির  ওপর  চারচালা  স্থাপত্যের  অলংকরণ  রয়েছে। তবুও   বাংলার  প্রকৃতিতেই  এই  কুঁড়েঘরের  ছকে  বানানো  দেবমন্দির  বিপুল  সমাদর  পেয়েছে, তা নিয়ে  কোনও  সন্দেহের  অবকাশ  নেই।

                                       এখন   প্রতিটি  শৈলী  সম্পর্কে  এখন  অল্পকথায়  আলোচনা  সেরে  নেওয়া  যেতে পারে।

ক) দোচালা  :  মন্দিরের  মাথায় সামনের ও পেছনের দিক  থেকে  দুটো  ছাদ  উল্টানো  ‘V’  আকারে  একবিন্দুতে  মিলেছে।  একে  ‘একবাংলা ’-ও  বলা  হয়। হুগলী জেলার চন্দননগরে  ১৭৩৯ সালে  ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর  তত্ত্বাবধানে বানানো  নন্দদুলাল মন্দির এর  উন্নত  নমুনা।  এছাড়াও মুর্শিদাবাদের  আজিমগঞ্জের  কাছেই  বড়নগরে   রয়েছে  নাটোরের  রানি  ভবানীর  দ্বারা  প্রতিষ্ঠিত  চারটি  একবাংলার  মন্দির যাকে  বলা  হয়  ‘ চারবাংলা  মন্দির ’ ( ১৭৫৫ )।  হুগলীর-ই  আঁটপুরে  রয়েছে  মিত্র বাড়ির  খড়ের  ছাউনির  চণ্ডীমণ্ডপ। যদিও  সেখানে  জ্যামিতিক  কাঠখোট্টা  ছকের  দুটো চাল  বোঝা যাবেনা ; তবুও দোচালার  ধরণ  থেকে  আলাদাও  করা  যাবেনা। এর সময় ১৭৪৭  সাল।   বাঁকুড়া  জেলার  বিষ্ণুপুর যা  জনগণের  কাছে  টেরাকোটার  শহর  বলে  পরিচিত ,  তার  অদূরেই  মদনমোহন  মন্দির  রয়েছে। ১৬৯৪ সালে মল্লরাজা  দুর্জন  সিংহ  এই  ‘ বাংলা চালার ছাদে একরত্ন  মন্দির ’  বানানো  করিয়েছিলেন।  এই  মন্দিরের  প্রবেশদ্বারেও  এই  দোচালা  কাঠামো  লক্ষ্য করা যায়।  আবার, হিন্দু  ধর্মের  বাইরেও  ইসলাম  ধর্মের  সংস্কৃতির  মধ্যেও  বাংলার  এই  রীতি  নিজের  জায়গা  করে  নিতে  পেরেছে।  মালদহ  জেলার  গৌড়ে  ফতেহ্  শাহের  সমাধি  ( ১৭শ শতক ) ও  সমাধির  সামনের  দীপমঞ্চের  আদলেও  দোচালা  শৈলী  উঁকি  দিয়েছে।

নন্দদুলাল মন্দির

ফতেহ্ শাহের সমাধি
 দীপমঞ্চ
চণ্ডীমণ্ডপ

খ) চারচালা : গ্রামাঞ্চলে  চারদিক  থেকে  চারটে  রেখা  ৬০ ডিগ্রি  কোণে  উঠে  গিয়ে  এক  বিন্দুতে মিশে  যে  চারচালা  তৈরি  হয়, তার  অনুসরণে  বানানো  মন্দির।  যদিও  এর  উদহরণ  খুব বেশি  দেখা  যায়না ;  তাও  নদিয়া  জেলার  শান্তিপুরের  জলেশ্বর  শিবের  মন্দির,  বড়িশার  সম্ভ্রান্ত  বনেদি  পরিবার  সাবর্ণ  রায়চৌধুরী বংশের  নন্দদুলাল  রায়চৌধুরীর  অকালপ্রয়াত  কন্যা  করুণার  স্মৃতিতে  টালিগঞ্জে  প্রতিষ্ঠিত  করুণাময়ী  কালিবাড়ির  প্রাঙ্গণের  শিবমন্দির  এর  মধ্যে  পড়ে।

জলেশ্বর মন্দির

গ) আটচালা : সবচেয়ে  জনপ্রিয়  ধারা।  চারচালার  ওপরে  আরও  একটি  ছোট  আকারের  চারচালা  বানিয়ে  তৈরি  করা। এক্ষেত্রে  ছোট  চারচালা  হয়  মন্দিরের  গর্ভগৃহ  আর   বড়  চারচালার  অংশে থাকে  বারান্দা  বা  দর্শনার্থীদের  প্রদক্ষিণ করার  জায়গা। রাঢ়  বাংলার  সবক’টি  জেলাতেই  এর  উপস্থিতি  রয়েছে।  এমনকি  বাংলার  প্রসিদ্ধ  তীর্থস্থানগুলিতেও  মূলতঃ  এই  শৈলীর  ব্যবহার  ঘটেছে।  উত্তর  কলকাতার  শোভাবাজার  এলাকার  লালমন্দির,  উত্তর  চব্বিশ পরগণার  দক্ষিণেশ্বর  মন্দিরের  চত্বরে  দ্বাদশ  শিবমন্দির  ( ১৮৫৫ ),  কালীঘাটের  কালীমন্দির  ( ১৮০৯ ),  বীরভূমের সিদ্ধপীঠ  তারাপীঠের  তারাদেবীর  মন্দির ( ১৮১৮), হুগলী জেলার  তীর্থস্থান তারকেশ্বরের  মন্দির (  ১৭২৯ ), গুপ্তিপাড়ার বৃন্দাবনচন্দ্র মঠের  দুটি  মন্দির,  নদিয়া  জেলার  শান্তিপুরের  শ্যামচাঁদ  মন্দির  ( ১৭২৬  ) , পূর্ব  বর্ধমান জেলার  সদর  শহর বর্ধমানের  কাছেই  নবাবহাটের  ১০৮  শিবের  মন্দির  ( ১৭৮৮ ), কালনার  ১০৮  শিবের  মন্দির  ( ১৮০৯ ) ,পঞ্চরত্ন  মন্দির,  দক্ষিণ  চব্বিশ  পরগণা  জেলার  জয়নগরে  মিত্রবাড়ির  দ্বাদশ  শিবমন্দির।

গ্রামবাংলায় আটচালার ধরণ (বনেরপুকুরডাঙা, বীরভূম)

                                         

নবাবহাটের ১০৮  শিবমন্দির
পানিহাটির দ্বাদশ শিবমন্দির

                             শুধু  এপার  বাংলা-ই  নয় ;  ওপার  বাংলা  অর্থাৎ  বাংলাদেশের  বেশ  কয়েকটি  জেলাতেও  যেমন  যশোরে  আটচালার  মন্দির  দেখা  যাবে।  যশোরের  মুড়লী  গ্রামের  জোড়া শিবমন্দির  যার  সাথে  সেনবংশের  রাজা  লক্ষ্মণসেনের  ঐতিহ্য  বা  লোকগাথা  জড়িয়ে  আছে, সেটিতেও  আটচালার  রীতি  প্রযুক্ত।  এছাড়াও  চাঁচড়ার  শিবমন্দির-ও  আটচালার  আঙ্গিকেই  তৈরি।

বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দির

ঘ) বারোচালা :  এটি বিশেষ  পরিচিত  নয়। তবে আটচালার যে  ধরণ, তাতেই  অতিরিক্ত  আরও  একটি  চালা বসিয়ে  মোট তিনধাপে বারোচালা  রীতি  বানানো  হয়েছে।

ঙ) জোড়বাংলা :  বাংলার  অত্যন্ত  সুবিখ্যাত  স্থাপত্যকলা। বিষ্ণুপুরে, বীরনগরে ( নদিয়া ), ইটোণ্ডা ( বীরভূম), চুঁচুড়া  ( হুগলী )-তে  এই  ধাঁচের  মন্দির  রয়েছে। দুটি একবাংলা  মন্দির  জোড়া  দিয়ে  বানানো  হলে  তাকে  জোড়বাংলা  মন্দির  বলা  হয়। উলা-বীরনগরের  অভিজাত মিত্রমুস্তৌফী  বংশের  পুরুষ  রামেশ্বর  মিত্রের  ১৬৯৪ সালে  বানানো  রাধাকৃষ্ণের  জোড়বাংলা  মন্দির  এখনও  দর্শকের  বা  ইতিহাসসচেতন  বাঙালির  মনকে  আকৃষ্ট করে।

বীরনগরের  জোড়বাংলা  মন্দির

                              বিষ্ণুপুরের  রাজা  রঘুনাথ সিংহের  সময়ে  ১৬৫৫ সালে  যে জোড়বাংলা  মন্দির তৈরি হয়েছিল, তার সাথে  বীরনগরের  মন্দিরের  একটু  তফাৎ রয়েছে। বীরনগরের  মন্দির  শুধু  জোড়বাংলা-ই, কিন্তু  বিষ্ণুপুরের  মন্দিরটির  মাথার  ওপরে  একটি  রত্ন বা  চূড়া  যুক্ত  হয়েছে। তাই  একে  বলা  হয়  একরত্ন-জোড়বাংলা  মন্দির।  যদিও  সময়ের  বিচারে  বিষ্ণুপুর বীরনগরের কাছে  কনিষ্ঠ, তবুও  বীরনগরের  মন্দিরটিকেই  আমরা  আদর্শ  মানি।  ‘ রত্ন ‘ একটি  সম্পূর্ণ  অন্য শৈলী। দেউল,  চালার  পরেই  যার  নাম  উঠে  আসে, সেটি  ‘ রত্ন ‘  আঙ্গিক।  হুগলীর  বালিদেওয়ানগঞ্জের  একটি  দুর্গামন্দিরেও এই  জোড়বাংলা  ও  রত্নধারার  অপরূপ  মেলবন্ধন  ঘটেছে।  যদিও  সেখানে  ন’টি  চূড়া  বা  নবরত্ন  রয়েছে।  বাংলাদেশের  পাবনা  জেলাতেও  বহু  পুরোনো  একটি  পরিত্যক্ত  জোড়বাংলা  মন্দির  একাকী  দিনযাপন  করছে।

একরত্ন-জোড়বাংলা মন্দির

জোড়বাংলা  রীতি  একসময়ে  এতই  জনপ্রিয়  ছিল  যে  বর্ধমানের  রাজা  কীর্তিচন্দ্র  দেবী  সর্বমঙ্গলার  মন্দিরের  নহবতখানা  ও  ক্ষীরগ্রামের সতীপীঠ যোগাদ্যা মন্দিরের  প্রবেশদ্বারেও এই  জোড়বাংলা  রীতিকেই  কাজে  লাগিয়েছিলেন।

সর্বমঙ্গলার মন্দিরের নহবতখানা

                                        বাংলার  চালা শৈলী  শেষ  অবধি  শুধু  বাংলাতেই  সীমাবদ্ধ  থাকেনি, পাশের  রাজ্য  ঝাড়খণ্ড,  উত্তরপ্রদেশ ও  দিল্লিতেও  পৌঁছে  গেছে। ঝাড়খণ্ডের  দুমকা  জেলার  মলুটী  গ্রামের  মৌলাক্ষী  দেবীর   মন্দিরে  বা  ১৯৭৩  সালে  দিল্লির  চিত্তরঞ্জন পার্ক  অঞ্চলে  কালীবাড়ির  স্থাপত্যে  আটচালার  ছবি  ধরা  পড়ে।  ভারতের অন্যতম  প্রধান  তীর্থস্থান  বৃন্দাবনের  কুসুম সরোবরের  স্থাপত্যেও  এই  দোচালা  শৈলী  হুবহু  প্রতিফলিত। রাজস্থানের জাঠ রাজা  সুরজমল  যাঁর  কথা  অবন ঠাকুর  রাজকাহিনী-তে  বলেছিলেন,  তিনিই  ১৮শ  শতকে  কুসুম সরোবরের  এই  ছত্রীগুলির  নির্মাণ   করিয়েছিলেন।  একসময়ে   মানসিংহের  হাত  ধরেই  বাংলার  শিল্পকলা  রাজস্থানে   পৌঁছেছিল,  তাই  দুই  প্রদেশের   স্থাপত্যশিল্পের  মধ্যে   প্রচুর  মিল  পাওয়া  যায়।  আরও  সুখবর  যে  এই  সময়ে  দাঁড়িয়েও  বাংলায়  পুরোনো  দেশীয়  রীতির  প্রতি  শ্রদ্ধা  ও  অনুরাগ  লক্ষ্য  করা  যাচ্ছে। গত  ১৯শে  মার্চ, ২০১৮  তারিখে  নদিয়া  জেলার  সদর  শহর  কৃষ্ণনগরের  ঘূর্ণীতে   আটচালা  শিবমন্দির  নির্মিত  হয়েছে।  

                                 ভালো  করে  খেয়াল  করলে  দেখা  যাচ্ছে  বাংলার  ইতিহাসের  সাথে এর  প্রবল  যোগাযোগ  রয়েছে।  মল্লভূমের  রাজারা,  রানি  ভবানী,  বর্ধমান  রাজপরিবার,  রানি  রাসমণি,  শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের  ম’ত  মহান  ও মহীয়সী  ব্যক্তির  পৃষ্ঠপোষকতাতেই  এই  কুঁড়েঘরের  রূপে  মন্দিরগুলি  গড়ে  উঠেছে।  তাই  তাঁদের বাংলা  মায়ের  প্রতি  ভালোবাসা  বা  আত্মিকতা  কখনওই  ভুলবার  নয়।  একাধিকবার  বৈদেশিক  বা  বিধর্মীর  আক্রমণে  ক্ষত  হলেও  বাংলা  তার  নিজের  রূপেই  মাথা  তুলে  স্বসম্মানেই  বাঁচতে  শিখেছে।  উত্তরবঙ্গের   মন্দির বাণেশ্বর, জল্পেশে  ইসলামিক  রীতির  প্রভাব  যেমন  পড়েছে,  তেমনই  বাংলার  অন্য প্রান্তে  ছড়িয়ে  থেকেছে  এই ‘চালা’ রীতির  মন্দিরগুলি।  তাই  পলাশীর যুদ্ধে  সিরাজ-উদ-দৌল্লার  দেশপ্রেম  বা  বঙ্গভঙ্গের  প্রতিরোধের  তুল্য  আন্দোলনে  না  নেমেও  মন্দিরস্থাপনার  মাধ্যমেও  বাঙালির  বাংলার  প্রতি  ভালোবাসার  জয়  হয়েছে।