মোহময়ী খাজুরাহো – শুভা চক্রবর্তী

খাজুরাহো  শব্দটি এসেছে খর্জুরবহ থেকে।সেদেশে ছিল খেজুরগাছের সমারোহ আর মন্দিরগাত্রে উটের স্হাপত্যকার্য এ দুইয়ের থেকে মনে করা হয় খাজুরাহো অন্চলে সে যুগে ছিল বালুময় মরুভূমি।সময়টা ৯০০ -১১০০ খ্রীঃ।এ সময় চান্দেলা রাজাদের রাজত্ব ছিল ঐ অন্চলে।ঐ দুশো বছরের রাজত্বকালে তারা ৮৫ টি মন্দির নির্মান করেছিলেন,যার মধ্যে মাত্র ২২ টি অবশিষ্ট আছে।এখানকার মন্দিরগুচ্ছ তিনটি ভাগে বিভক্ত – পশ্চিম ভাগেই রয়েছে ১৮ টি মন্দির।যার মধ্যে লক্ষণ মন্দির ও কান্ডারীয় মহাদেব মন্দির বিশেষ দ্রষ্টব্য।মন্দিরগাত্রের অসাধারণ কারুকার্যে বিমুগ্ধ হতে হয়।আভঙ্গ ও ত্রিভঙ্গঠামের মূর্তিই এখানে বেশী দেখা যায়।বিভিন্ন ঠামে সুতনুকাদের মূর্তিগুলি অবাক করে।স্হপতিরা নাগরশৈলীতে তুলে ধরেছেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর লোকেদের,তুলে ধরেছেন তাদের বিভিন্ন অভিব্যক্তি ! পূর্ব বিভাগে রয়েছে দুটি মন্দির।জৈন মন্দির সেগুলি।সমভঙ্গঠামের আধিক্য এখানে।দক্ষিণ বিভাগেও দুটি মন্দির দেখা যায়।দুলহাদেও মহাদেব মন্দির ও চতুর্ভূজ মন্দির।দুলহাদেওতে মহাদেব রয়েছেন বররূপে।আর চতুর্ভূজ মন্দিরে একটিমাত্র মূর্তির মধ্যে ত্রিদেবের সমাহার ! মুখমন্ডলী শিবের,শরীরের মধ্যভাগ নারায়ণের- হাতে রয়েছে শঙ্খ,চক্র,গদা,পদ্ম ও শরীরের নিম্নভাগটি কৃষ্নের-ঠিক যেমন করে শ্রীকৃষ্ণ বাঁশি বাজান ঠিক তেমনটি।     

মন্দিরগাত্রের রয়েছে চারটি স্তর।সবার উপরে রয়েছে ভগবানের মূর্তি,তারপর মনুষ্য,এরপর নাগরিক কীর্তিসমূহ ও শেষে পশু ও পাশবপ্রবৃত্তি।মন্দির গড়ে উঠেছে বালুপাথর দিয়ে এবং দূর থেকে মন্দিরগুলিকে দেখলে মনে হয় হিমালয় এবং হিমালয়ের নীচে স্তরে স্তরে পাহাড়।বড় মনোমুগ্ধকর সে দৃশ্য।      এবার আসি ইরটিকা প্রসঙ্গে- যে কারণে খাজুরাহোর নাম আবার বদনামও বটে।প্রসঙ্গত বলি খাজুরাহোর তুলনায় ইরটিকা মূর্তি অনেক বেশী দেখা যায় কোনার্কে।কিন্তু সেগুলি রয়েছে ছড়ানো ছিটানো যেখানে খাজুরাহোরগুলি পরপর।তাই চোখে পড়ে বেশী। কিন্তু রাজারা কেন এমন মূর্তিসমূহ তৈরী করালেন সেকথার উত্তর খুঁজতে গিয়ে ঐতিহাসিকরা যেসব কারণগুলির উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতবাদটি হল শঙ্করাচার্য আশ্রম তৈরী করার প্রথম যৌবনে বিপুল সংখ্যক সাধারণ মানুষ সন্ন্যাসধর্ম গ্রহণ করতে শুরু করেন।অথচ রাজার চাই সৈন্য যুদ্ধ করার জন্য।সেযুগে সংবাদপত্র বা কোন বিজ্ঞাপনের ব্যবস্হা ছিল না।মন্দিরগাত্রই ছিল বিজ্ঞাপনের একমাত্র স্হান।সেই কারণেই মন্দিরগাত্রে শুরু হল ইরটিকার সমারোহ।সমাজের ছোট জাতের লোকেদের মন্দিরে প্রবেশের অধিকার ছিল না।তাই তাদের জন্য এইসব বিজ্ঞাপন মন্দিরের বহির্গাত্রেই করা হত।         

ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের শিরোপা পেয়েছে খাজুরাহোর মন্দিরগুলি।ওখানে বেড়িয়ে যা বুঝলাম ওখানকার আদিবাসী এবং গ্রামীণ মানুষের জীবিকা অনেকটাই নির্ভর করে পর্যটনশিল্পের উপরে।বড় গরীব তারা।মন্দিরের বাইরে গরীব মানুষেরা মাত্র দশ টাকা নিয়ে কাড়াকাড়িও করেন।তাই আরও অনেক বেশী পরিমাণে মানুষ সেখানে বেড়াতে গেলে বড় উপকৃত হবেন তারা আর যারা যাবেন তাদেরও চক্ষুসার্থক হবে।