চিয়ার্স – শুভ্র রাহা

রাজারহাটের তালগাছ স্বরূপ লম্বা লম্বা যান্ত্রিক কসাইখানা গুলোর মধ‍্যে একটি থেকে জ্যান্ত এবং সশরীরে মুক্তি পেয়ে বেশ ফুরফুরে মন নিয়ে রাস্তার ধারে এসে ক্যাব বুক করল নীহার। আজ শুক্রবার, আগামী দুদিন ছুটি, তাই মনে সারাদিনের ফ্রাস্টেশানের লেশমাত্র নেই। শনি-রবি এই আধমরা লাশ টাকে বিছানাতে ফেলেই কাটিয়ে দেবে সে। কিন্তু শুধু তো আর শুয়ে বসে সময় কাটানো যায়না, তার জন্য যথেষ্ট পরিমান রসদেরও প্রয়োজন। তাই নিজের বাড়ি অর্থাৎ কসবার একটি  2BHK  ফ্ল‍্যাটের একটু আগেই ক‍্যাব থেকে নেমে পড়ল সে। রাস্তা পার হয়ে গিয়ে লাইন দিল লোহার গেট দিয়ে ঘেরা ছোট্ট একটা দোকানের সামনে। ১০-১৫ মিনিট কসরত করার পর সেখান থেকে যখন বেরিয়ে এল তখন তার হাতে একটি 100 pipers এর বোতল। সেটাকে ব্যাগে পুরে, ফ্ল‍্যাটের নিচের পান সিগারেটের দোকান থেকে ৪ প্যাকেট গোল্ড ফ্লেক কিনে, দু’দিনের রসদের যোগান সুনিশ্চিত করে তিন তলার ফ্ল‍্যাটে যখন সে ঢুকল, ঘড়িতে তখন ঠিক রাত দশটা বেজে পাঁচ মিনিট। হাত মুখ ধুয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে কাজের মাসির সাত সকালে রেঁঁধে যাওয়া খাবার গুলো ফ্রিজ থেকে বের করে দেখে নাক সিঁটকাল নীহার। রোজ রোজ সেই একঘেয়ে খাবার। কোথায় তার মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ, আর কোথায় এই যেমন তেমন করে রান্না করা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া ভাত ডাল। এইসব ভাবতে ভাবতে খাবার গুলো একে একে মাইক্রোয়েভে দিয়ে গরম করতে লাগল সে। ফ্রিজ থেকে সোডার বোতল টা বের করে বানিয়ে নিল ছোট একটা পেগ। এক সিপ মুখে দিতেই শরীর টা কেমন চনমনে হয় গেল। নিজে রান্না করার সময়েও এটাই করে সে। রান্না করতে করতে এই ছোট্ট ছোট্ট সিপ নেওয়াটা বেশ পছন্দের তার। ১১টার মধ‍্যে ডিনার শেষ করলেও সপ্তাহের আর ৫ টা দিনের মত তক্ষুনি শুতে না গিয়ে বসার ঘরের সোফায় বসে টিভিটা অন করে ফুটবল ম্যাচ টা চালিয়ে দিল। তারপর যত সময় গেছে সেটা খানিকটা এরকম – পুরো ১২০ মিনিট এর ম্যাচে একটাও গোল হয়নি, সামনের টেবিলে রাখা অ্যাশট্রে টা পুরো ভরে গিয়ে ছাই গুলো এখন টেবিলের চারধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে, আর পাশের 100 pipers এর বোতলের লেভেল টা আস্তে আস্তে নেমে তলানি তে ঠেকেছে ।

সকাল ৭টা

বাড়ির কলিং বেল টা এক নাগাড়ে বেজে যাচ্ছে, ঘুম ভেঙে গেলেও ওঠার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা করল না নীহারের। মাথাটা ভীষণ ধরেছে, গায়ে চাদর টা ভাল করে জড়িয়ে ওপাশ ফিরে শুল সে। কিন্তু এ অতিথি ছাড়বার নয়, একটানা বেল বাজিয়েই যাচ্ছে। অবশেষে কটা খিস্তি আউড়ে উঠে পড়তে বাধ্য হল সে, বাকি খিস্তি গুলো জমিয়ে রাখল অতিথির মুখটা দেখার পর ঝাড়বে বলে। কাজের মাসি কে বলা আছে শনি রবিবার যেন ১০টার আগে মুখ না দেখায়। তাহলে কে এল এত সকালে তার ঘুমের বারোটা বাজাতে..

এক ঝটকায় দরজা টা খুলেই চমকে উঠল নীহার, সামনে দাঁঁড়িয়ে সন্তু।

–‘আরে !! তুই ? কি ব্যাপার ? হঠাৎ ?’                                                                                       

সন্তু কে দেখা মাত্রই একগাদা প্রশ্ন ছুড়ে দেয় নীহার তার দিকে তাক করে।                                                           

— ‘সব প্রশ্ন কি এখানে দাঁঁড়িয়েই করবি নাকি ভেতরেও ডাকবি  ?’

সন্তু !! তার ছোটবেলার বন্ধু, খুব কাছের একজন মানুষ। নার্সারি থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ সবই একসাথে। পরে অবশ‍্য কলেজে পড়াকালীন দলে আর একজন যোগ হয়েছিল, সঞ্জয়, সে এখন চাকরিসূত্রে ব‍্যাঙ্গালোরে আছে। আর সন্তু গত চার মাস আগে নিজের দু’বছরের প্রেমিকাকে বিয়ে করে আমেরিকা চলে যায়।                                                                              

— ‘সাত সমুদ্র পার করে কোনো কথা নেই বার্তা নেই হঠাৎ এই সাত সকালে আমার বাড়ি, আমার মাথায় কিন্তু কিছু ঢুকছেনা। বাড়িতে সবাই ঠিক আছে তো? কাকিমা ? রুপা ? ‘,সন্তু কে ঘরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করতে করতে জিজ্ঞেস করে সে ।                                                                                     

–‘হ‍্যাঁ রে মায়ের শরীর ঠিকই আছে কিছু হয়নি।  ‘                                                                                            

–‘শুধু কাকিমার কথা কিন্তু আমি জিজ্ঞেস করিনি। হেঁঁয়ালি না করে খুলে বল, সকাল সকাল মুখ খারাপ করাস না আমার।’

— ‘আরেবাবা রুপাও একদম ঠিক আছে, হ্যাঁ একটু মন খারাপ তো বটেই, ওকে ছেড়ে আমি এতটা দূর চলে এলাম। একটু কষ্ট পাবে, বিয়ের পর আমাকে ছেড়ে তো কোনদিন একা থাকেনি।’                                                       

— ‘মানে ?? তুই রুপা কে একা রেখে বলা নেই কওয়া নেই হুট করে এতটা দূর কোনো কারন ছাড়াই এমনি এমনি চলে এসেছিস? এটা আমায় বিশ্বাস করতে হবে ?  ‘                                                                                 

–‘এমনি এমনি তো আসিনি। কারন তো আছে, অবশ্যই আছে।’                                                                           

— ‘তা সেই কারন টা জানার জন্য কি এবার আমায় আপনার পায়ে ধরতে হবে গান্ডু ? ‘                                                  

— ‘তুই কাকা হয়েছিস।’ ঝট করে কথাটা বলে থেমে যায় সন্তু।                                                                             

— ‘মানে ?? দেখ সন্তু কাল রাতের হ‍্যাংওভার টা কিন্তু এখনও কাটেনি আমার, মাথাটা যথেষ্ট ধরে আছে তার ওপর তোর এই সাত সকালে এসে পাগলামো, এবার কিন্তু ক‍্যালানি খেয়ে যাবি তুই। ‘                                                                     

— ‘আমি কিন্তু সত্যিই বললাম রে। তুই-ই বিশ্বাস করছিস না।’                                                                                   

— ‘ওকে !! মানে তুই বলতে চাস ঠিক ৪-৫ মাস আগে তুই বিয়ে করেছিস, আর এর মধ্যে আমি কাকু হয়ে গেছি? শালা এ তো রজনিকান্তের বাবার পক্ষেও সম্ভব না।’                                                                                       

কথাটা শোনার পর ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে সন্তুর।                                                 

— ‘আচ্ছা দাঁঁড়া দাঁঁড়া, এইবার বুঝতে পারছি, অনসাইট যাওয়ার দোহাই দিয়ে বিয়েটা হুট করে কেন তখন সেরে ফেললি।’    

— ‘একদাম সাহি পাকড়ে হ‍্যায় মেরে আকা। সেই সুসংবাদ টা জানাতেই এত কষ্ট করে এখানে আসা। সাথে আরো একটা কাজ আছে। আসলে তাড়াহুড়ো করে শিফট হওয়ার চক্করে আমার কিছু ডকুমেন্টস আমি হারিয়ে ফেলেছি, যেগুলো ভবিষ‍্যতে আমার ছেলের প্রয়োজন হতে পারে। তাই একজন উকিল কে ধরে এখন সেই সব ঝামেলা মেটাতে হবে।

কিন্তু মুশকিল হয়েছে কি জানিস, এখানে আসা অবধি অফিসের কাজের চক্করে আমার এই আসল কাজ গুলোই করে উঠতে পারছিনা। সারাদিন অফিসের কাজ করতে করতেই কেটে যায়। তাই এই সাত সকালে কাজের বোঝা ঘাড়ে চাপার আগেই তোর কাছে এলাম। তোকে একটা হেল্প করতে হবে। ‘

— ‘কি শুনি?’

— ‘তোকে আমি একজন উকিলের নাম্বার দিচ্ছি। এঁঁর সাথে আমার আমেরিকা থাকতে কথা হয়েছিল। আমার যেসব ডকুমেন্টস-এর কথা বলছিলাম, ওনাকে দিয়ে সেগুলো আমি রেডি করিয়ে রেখেছি। ফার্ন রোডে চেম্বার। তোকে একটু সেখানে গিয়ে ডকুমেন্ট গুলো এনে দিতে হবে। পারবি তো ভাই?’

  — ‘এ আর এমন কি ব‍্যাপার। চাপ নিসনা বস, আমার তো আজ কাল দু’দিন ই ছুটি। কালকের মধ‍্যে তোর সব ডকুমেন্টস তোর হাতে চলে আসবে।’

— ‘ওহ্হ্ বাঁচালি ভাই। এটা নিয়ে সত‍্যি খুব টেনশানে ছিলাম।’

— ‘আচ্ছা এবার বল তো, তোর গুনকীর্তি বাড়িতে জানিয়েছিস? ‘                                                                                          

— ‘পাগল !! কাউকে কিছু জানাইনি। তোকেই শুধু জানিয়ে রাখলাম, পরে কাজে লাগতে পারে। সঞ্জয় কেও কিছু বলিনি। বললেই হাজার টা প্রশ্ন করতে শুরু করবে। আর ওকে তো চিনিস ই, ছেলে ভাল কিন্তু পেটে একটা কথা থাকে না।’                                                                                                                            

— ‘হুমমম বুঝলাম, তবে যখন ও জানতে পারবে একটা মার ও কিন্তু বাইরে পড়বে না। ‘                                   

  — ‘হাঃ হাঃ হাঃ শুধু মার ?? সাথে যে গুচ্ছ গুচ্ছ খিস্তি খেতে হবে তার জন্যও আমি প্রস্তুত।’                                                                    

এই বলে দুজনে একসাথে অট্টহাসি করে উঠল। নীহার একটা সিগারেট ধরিয়ে, সিগারেটের প্যাকেট টা সন্তুর দিকে বাড়িয়ে দিতে সন্তু মানা করে দিল। অবাক হয়ে গিয়ে কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে থাকার পর নীহার বলে,                                                                                                         

— ‘বলিস কি রে, এক গ্লাসের বন্ধু আমরা, এ যে ভূতের মুখে রাম নাম !! তা কন্ট্রোল না এক্কেবারে স্টপ? ‘                                                                                                  

   — ‘হ্যাঁ রে একেবারে ছেড়েই দিলাম। অনেক তো হল, এবার তুইও চেষ্টা কর।’                                                     

— ‘এটা তো ঠিক করলেন না মাস্টারমশাই। সেই ক্লাস ৭-এ যখন স্কুলের টিফিন টাইমে লুকিয়ে লুকিয়ে দু তিন টান মারা শিখিয়েছিলেন, তারপর ফার্স্ট ইয়ারে এসে প্রথম যখন হাতে রঙিন জলের গ্লাস ধরালেন, কই তখন তো বলেননি মাঝপথে এসে এরকম একজন নিষ্ঠাবান ছাত্রের হাতটা এভাবে ছেড়ে দেবেন। ‘                                                                                                                         

— ‘একদিন আমিই তোকে নেশা ধরিয়েছিলাম, আর আজ নয় আমিই বলছি তোকে নেশা ছেড়ে দিতে, বল পারবি না? একবার অন্ততঃ চেষ্টা করেই দেখ না। ‘

এক দৃষ্টে কিছুক্ষণ সন্তুর দিকে তাকিয়ে থেকে নীহার বলে – 

— ‘সিগারেট, মদ ছেড়ে আমেরিকা গিয়ে শুকনো নেশা টেশা ধরেছিস না তো ?? দেখিস ভাই, সেগুলো কিন্তু বেশী ডেঞ্জারাস ।’                                                                                                                

— ‘না রে সেসব কিছু না। আসলে অনেক অত্যাচার করেছি বুঝলি, শরীর টার ওপর। আর কি জানিস, নিউটনের তৃতীয় সূত্রের মত, তুই তোর শরীর কে যেটা দিবি, তোর শরীরও সেটাই তোকে ফেরত দেবে, সেটা ভাল হোক কি খারাপ। তাই আমি সব ছেড়ে দিয়েছি। এবার তোর পালা,’

এই বলে সন্তু একহাতে সোফার সামনের টেবিলের উপর রাখা ছাই তে ভর্তি অ্যাশট্রে আর অন‍্যহাতে মদের খালি গ্লাস টা তুলে নিয়ে নীহারের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে বলল -‘ কন্ট্রোল বন্ধু কন্ট্রোল। ‘                                                                                                                        

— ‘কাজ টাজ ছেড়ে কোন এনজিও জয়েন করেছিস নাকি বল তো ? ‘, খানিক টা সন্দেহের চোখে প্রশ্ন টা করে নীহার।                                                                                                                                     

হাসল সন্তু, বড় মলিন সে হাসি, তারপর বলল — ‘করিনি বটে, তবে আমেরিকা থাকতে শেষ কয়েক মাস ইচ্ছে টা খুব পেয়ে বসেছিল।’                                                   

— ‘বেশ, মাথায় রাখলাম তোর কথা। এবার থেকে চেষ্টা করব আস্তে আস্তে নেশা কমানোর। যাকগে এবার বল, চা চলবে তো ? নাকি সেটাও ছেড়েছিস?’                         

— ‘চায়ে কোন না নেই ভাই, আলবাত চলবে।’                                                                            

— ‘ওকে বস্, জাস্ট ৫ মিনিট দে, এক্ষুনি বানিয়ে আনছি।’

এই বলে কিচেনে চলে গেল নীহার, ঝটপট বানিয়ে ফেলল দু’কাপ চা, অল্প চিনি আর বেশি লিকার দিয়ে, একদম সেই কলেজের দিনগুলোর মত, যখন তিন মক্কেল একসাথে হস্টেলে থাকত আর সারাদিন নানারকম আলোচনা তর্কবিতর্কের মধ‍্যে ধ্বংস হত কাপের পর কাপ চা।

চা নিয়ে বসার ঘরে এসে নীহার দেখল সোফাটা খালি। সন্তু আমেরিকা চলে যাবার পর এই ফ্ল‍্যাটটা কিনেছে নীহার, তাই সে ভাবল হয়ত বাকি ঘরগুলো বা ব্যালকনি টা ঘুরে দেখছে সন্তু। কিন্তু পরবর্তী দু’তিন মিনিট ধরে ক্রমাগত নাম ধরে হাঁকডাকের সাথে সারা ফ্ল‍্যাট আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও বেডরুম, ব্যালকনি, বাথরুমের কোনও কোনা তেও সন্তুর হদিশ মিলল না। সন্তুর নাম্বারে বার বার ফোন করলেও প্রতিবার ই ফোন আনরিচেবল। অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়ে সোফায় বসে পড়ল নীহার। মাথাটা জ‍্যাম হয়ে আছে, চা টাও এতক্ষনে ঠান্ডা জল। একটা সিগারেট ধরিয়ে ভাবতে লাগল..                                                                                                     

..এত সকালে সন্তুর আসা, ফ্ল‍্যাটের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ হওয়া সত্ত্বেও একটা জলজ‍্যান্ত মানুষের এভাবে উবে যাওয়া, নাহ্ কাল রাতে নেশা টা বোধহয় একটু বেশীই হয়ে গেছে। তাহলে কি নেশার ঘোরে এতক্ষন সে স্বপ্ন দেখছিল? আদৌ হয়ত কেউ আসেইনি। নাঃ এভাবে আর চিন্তা করতে পারছেনা। সন্তুর মা কে ফোন করে সব জিজ্ঞেস করবে এই ভেবে মোবাইল টা হাতে নিতেই ফুটে উঠল সঞ্জয়ের ছবি, সাথে লেখা ‘সঞ্জয় কলিং’। সকাল ৮টায় সঞ্জয়ের ফোন, কিছু অঘটন হল নাকি ভেবে তাড়াতাড়ি কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে সঞ্জয় এর অস্পষ্ট গলা-

–‘তোকে অনেক ক্ষণ ধরে ফোনে ট্রাই করছি, লাইন টা কিছুতেই পাচ্ছিলাম না..’

— ‘কেন কি হয়েছে?’

— ‘সন্তু গতকাল এক্সপায়ার করে গেছে রে, ও আর নেই..’

দু’আঙ্গুলের ফাঁক গলে সিগারেট টা পড়ে যায় নীহারের। ফোনের মধ‍্যেই কান্নায় ভেঙে পড়ে সঞ্জয় বলে,

— ‘লাং ক্যান্সার, লাস্টস্টেজ। ডাক্তার রা অনেক চেষ্টা করেছিল বাঁচানোর, কিন্তু তার আগেই..’

লাইন টা কেটে যায়। তবু ফোন টা কানে ধরে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকে নীহার। সঞ্জয়ের একটা কথাও তার বোধগম‍্য হয়না। ও যা বলল কি করে সত‍্যি হয় সেটা? সে তো আজ একটু আগেই তার চোখের সামনে সন্তু কে হাসতে কথা বলতে দেখেছে। তাহলে কি.. ভাবতেই তার শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা জলের স্রোত নিচে নেমে গেল, কপালে ফুটে উঠল ভোরের শিশিরের মত বিন্দু বিন্দু ঘাম। মাথা টা কেমন যেন ঘুরতে লাগল তার, ওঠার চেষ্টা করেও উঠতে পারল না। পা টা টল মল করছে, শরীর আর দিচ্ছে না। বসে বসেই শরীর টা এলিয়ে দিল সোফায়। চোখ দুটো বুজে আসছে, মাথার ঘাম ভিজিয়ে দিছে পিছনের সোফা। চেতনা পুরোপুরি লোপ পাবার আগে শেষবারের মত চোখ টা খুলতেই আঁতকে উঠল নীহার। ঠিক তার সামনের সোফায় বসে আছে সন্তু। মুখটা এবার কেমন যেন ফ‍্যাকাশে লাগছে তার। ঢোঁক গিলে নীহার কিছু বলতে গিয়ে উপলব্ধি করে তার গলা থেকে কোনও আওয়াজ বেরোচ্ছে না। আস্তে আস্তে সন্তু তার হাত দুটো তুলে ধরে তার সামনে। নীহার দেখতে পায় সন্তুর এক হাতে ধরা রয়েছে মদের খালি গ্লাস আর অন‍্য হাতে দুই আঙ্গুলের মাঝে তার পড়ে যাওয়া আধপোড়া সিগারেট টা। ঠোঁটের কোনে একচিলতে হাসি ফুটিয়ে তুলে সন্তু বলে,

— ‘চিয়ার্স বন্ধু..’