শেষ পর্যন্ত – ঈশান মজুমদার

আমার দিকে তাকিয়ে আমার নিজেরই কেমন একটা অনুভূতি হয়। আশ্চর্য এক অনুভূতি, যেন অনেকদিনের চেনা মেঘ থেকে কেউ বৃষ্টি ঝরিয়ে দিয়েছে এক মুহূর্তে। আর সেই বৃষ্টিদানা থেকে বৃষ্টিধারা হয়ে যখন ঝরে, তখন মনে হয় আজ সারাদিন ভিজবো।সবুজ আমাকে সেই ছোটোবেলা থেকেই ভালোবাসে। প্রথম যেদিন দেখা হয়েছিলো, সেদিন থেকেই ও আড়াল হতে আমায় দেখতো।আমি অনুভব করতাম, বুঝতে দিতাম না।হঠাৎ একদিন বলে বসলো, “তুমি জানো তুমি ঠিক কতটা সুন্দর?” আমি জানি। কিন্তু সেদিন শুধুই মাথা নেড়ে বলেছিলাম, “কে বলেছে তোমায়?”ও বলেছিল, “তোমার নিজেকে লুকিয়ে রাখার এতো চেষ্টা, সফল হও কি? তোমার প্রেমিকরা একে একে ছুটে আসে তোমার কাছে। ঠোঁট ছোঁয়ায় তোমার বুকে, পাগল হয়ে যায় তোমার রূপ দেখে।একটা মুহূর্ত, শুধুমাত্র একটা মুহূর্ত তোমায় পাওয়ার জন্য তাদের কি আকুতি।”

আমি একটু মজা করেই প্রশ্ন করি, “রাগ হয় তোমার, ওরা যখন আসে?” সবুজ চুপ করে থাকে। 


– “কি গো, বলবে না?”


– “হয়”।


– “কি করো তখন?”


– “জানি না।”


– “বলো না।”


– “মুখ ফিরিয়ে থাকি।”


সেদিন রাতে যখন ভরা জোৎস্নার সবুজ আমার কোলে মাথা রেখে এতো কথা বলছিল, আর আমি ওর চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিলাম; তখন হঠাৎ সেই মায়াবী রাতে মাতাল হতে ইচ্ছে করলো। মনে হলো আমি যেন কোনো স্বর্গের অপ্সরা, যে নিজের সুবাসে নিজেই পাগল হয়ে যেতে পারে। সবুজকে বললাম, “চেয়ে থাকো আমার দিকে!” ও অভিমান করে আমার কোলে মুখ ঢেকে রাখলো; কথা বললো না।কিভাবে বোঝাবো ওকে, এই কাজটা যে আমাকে আর পাঁচজনের জন্য করতে হয়। আকি তো তাদের ডাকি না, তারা আমার কাছে আসে। একটু স্পর্শ পেতে।আমার অহংকার হয়। হ্যাঁ, ভীষণ অহংকার হয় আমার। মা যেদিন চলে গেলো শুধু এটুকু বলে, “রূপ আর বর্ণটা দিয়ে গেলাম, সামলে রাখিস। আমার গায়ের রংটাই পেয়েছিস তুই, আমার পরিণতি যেন তোর না হয়।পরোয়া করিনা আমি কোনোকিছুর। হ্যাঁ, ওরা আমায় ভোগ করে; করুক। আমার সেই ক্ষমতা আছে, সৌন্দর্য আছে, আকর্ষণ আছে।শুধু সবুজ যখন পাশে বসে, ওর নি:শ্বাসটুকু আমার গায়ে এসে পড়ে। ওর অল্প স্পর্শ, অল্প ঘ্রাণ যখন আমার অঙ্গ ছুঁয়ে যায়; হঠাৎ পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। বেঁচে নিতে ইচ্ছে করে এই মাতাল জোৎস্নায়। ও ফিসফিস করে বলে, “ভালোবাসো?” মনে হয়, আঁকড়ে ধরি ওকে, আর সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দিয়ে বলি, “ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি।”


এতক্ষণ ধরে বাগানে ফুটে থাকা ফুলটি এমন অনেক কথাই ভাবছিলো। একটি প্রজাপতি এগিয়ে আসছিল তার দিকে। হঠাৎ একটি হাত এসে ছিঁড়ে নিলো ফুলটিকে, ঠাকুরের কাছে অর্পণ করতে হবে যে!পাশের সবুজ ঘাসটিকেও ছেঁটে দিলো মালি, ‘বড্ড বড়ো হয়ে গেছে’, এই ভেবে।শুধু প্রজাপতিটাই উড়ে গেলো অন্যদিকে, অন্য একটা ফুলের কাছে। পরাগরেণু চাই যে তার!

2 Comments Add yours

  1. Dipankar Sen says:

    Wonderfully expressed .Fabulous!

    Like

  2. Ritesh Bera says:

    সুন্দর।

    Like

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.