২০১১ সালের জনগণনার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে ৫-১৪ বছর বয়সী শিশু সংখ্যা প্রায় ২৬ কোটি, যার মধ্যে প্রায় ১ কোটি শিশু ‘Main Worker’ বা ‘Marginal Worker’ হিসেবে কোথাও না কোথাও কাজ করে। শিশুশ্রমের সংজ্ঞা অনুযায়ী, এই ১ কোটি শিশু, তাদের স্বাভাবিক শৈশব ও শিক্ষা থেকে যে শুধু বঞ্চিত তা নয়, এরা এমন কাজের সাথে যুক্ত যেই কাজ এদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিসাধন করে। স্বাধীনতার এত বছর পরেও, এবং শিশুশ্রম বিরোধী নানা আইন, ‘শিক্ষার অধিকার আইন, ২০০৯’ জাতীয় শক্তিশালী আইন থাকা সত্ত্বেও দেশে এই হারে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা কি এটাই প্রমাণ করে যে, শুধু ‘Preventive Mesure’ দিয়ে এই ধরণের বেআইনি কাজ বন্ধ করা সম্ভব নয় ? তাহলে সমস্যা কি আরও গভীরে ?
তার আগে আমরা জেনে নিই, শিশুশ্রমের সংজ্ঞা ঠিক কি ? International Labour Organisation জানাচ্ছে, –
“The term “child labour” is often defined as work that deprives children of their childhood, their potential and their dignity, and that is harmful to physical and mental development. It refers to work that:
- is mentally, physically, socially or morally dangerous and harmful to children; and/or
- interferes with their schooling by: depriving them of the opportunity to attend school; obliging them to leave school prematurely; or requiring them to attempt to combine school attendance with excessively long and heavy work.”
Reference: https://www.ilo.org/ipec/facts/lang–en/index.htm
অর্থাৎ সহজ ভাষায়, যে কাজ শিশুদের শৈশব/কৈশোর কাটানোর পথে ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়ায়, তাদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক বা নৈতিক গঠনের ক্ষতি করে অথবা, তাদের স্কুল যাওয়া বা জ্ঞান আহরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাকেই আমরা “শিশুশ্রম” বলছি।

International Labour Organisation আরও জানাচ্ছে, ১৫ বছরের কম কেউ শ্রমের ভাগিদার হলেই তাকে শিশুশ্রম বলা হচ্ছে। এবং অতি-বিপজ্জনক (খনিতে কাজ, দিনমজুর ইত্যাদি) কাজের ক্ষেত্রে এই বয়সটা ১৮।
অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু-র মতে, যদি মা-বাবারা মনে করেন যে শিশুশ্রম সেই পরিবারের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য, অর্থাৎ, সেই বাড়ির শিশুরা কাজ না করলে সেই পরিবারের ন্যুন্যতম চাহিদা মেটানো যাবে না, তাহলে শিশুশ্রমের বেয়াইনি-করণ নিরর্থক। ব্রিটেনে ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, কিছু মা-বাবা বাধ্য হয় তাদের শিশু দের শ্রমিকের কাজ করাতে, কারণ এটা ছাড়া তাদের কাছে আর কোনো উপায় থাকে না। সামাজিক পরিস্থিতি তাদের বাধ্য করে। অর্থাৎ, এটা পরিষ্কার যে, শিশুশ্রমের মূল শিকড় কোথাও গিয়ে সেই দারিদ্রের কথা-ই বলে।
কৌশিক বসু একটি পরিস্থিতির কল্পনা করতে বলেছেন, অর্থনীতির ভাষায় যাকে assumption বলা হয়। ধরা যাক, শিশুশ্রম আইনত ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হল। এবার তাহলে Labour Market এ Labour Shortage দেখা দেবে। কারণ, শিশুদের থেকে প্রাপ্ত শ্রম আর Production এ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায়, Labour Demand বেড়ে যাওয়ার কারণে Adult Wage, অর্থাৎ প্রাপ্তবয়স্কদের শ্রমের মূল্য বাড়তে বাধ্য। এই অবস্থায় মা-বাবারা তাদের সন্তানদের কাজে পাঠাবেন না। কিন্তু, আমরা জানি, Market এত সহজ নিয়মে চলে না। বিশেষ করে ভারতের মতো Mixed Economy তে, Labour Wage এর ওঠাপড়ার ক্ষেত্রে সরকারের অনেকখানি ভূমিকা থাকে। অর্থাৎ, সরকারি হস্তক্ষেপ শিশুশ্রম নিরোধের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

চলে আসব International Labour Organisation এর একটি রিপোর্টে, যেখানে বলা হচ্ছে, ২০০১ থেকে,২০১১ সালের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে শিশুশ্রম কমলেও, শহরাঞ্চলে তা বেড়েছে। এবং, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশ, ভারতে মোট শিশুশ্রমিকের প্রায় ৫৫% ই এই পাঁচটি রাজ্যের।
এছাড়া, আরও যা যা তথ্য পাওয়া যায় উপরোক্ত সংস্থার অন্যান্য সমীক্ষা থেকে, তাতে বলা হয়েছে –
১) ভারতে প্রতি ১১ জন শিশুর মধ্যে ১ জন শ্রমিক।
২) মেয়েদের থেকে ছেলেদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি।
৩) ১৫-১৭ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরা যারা শিশুশ্রমের সাথে যুক্ত, তাদের ৬৩% অতি-বিপজ্জনক কাজের সাথে যুক্ত।
৪) অতি-বিপজ্জনক কাজের সাথে যুক্ত শিশুশ্রমিক দের ১০% পারিবারিক ভাবে এই কাজ করে।
২০০১ সাল থেকে ২০১১ সাথে ভারতে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ৬৫% হ্রাস পায়।

সূত্র:
১. https://labour.gov.in/sites/default/files/Census1971to2001.pdf
২. https://labour.gov.in/sites/default/files/Census-2001&2011.pdf
ভারত সরকারের এখনও পর্যন্ত নেওয়া দুটি পদক্ষেপ অনুযায়ী –
১। কোনো শিশুর বাধ্যতামূলক শিক্ষার বয়সের কমে বা অন্তত ১৫ বছরের নীচে কোনো শিশুরই কাজ করা নিষেধ।
২। ১৮ বছরের নীচের কোনো শিশুর অতি-বিপজ্জনক কাজ নিষেধ।
কিন্তু তা সত্ত্বেও, আমরা জানি আইন, আইন হয়েই থেকে যায়, সামাজিক ব্যাধি সহজে যায় না। এখনও দোকানে বাজারে শিশুরা মুখ বুজে কাজ করে চলেছে। অনেক শিক্ষিত বাড়িতেও ছোট ছেলেমেয়েরা ‘কাজের লোক’ হিসেবে কাজ করে, এবং একজন প্রাপ্তবয়স্কের কাজই করে। সারা দেশে পরিযায়ী শ্রমিক দের মধ্যে কত শিশুশ্রমিক আছে, তা হয়তো ভাবনার বাইরে। ২০১১ এর পর জনগণনা হয়নি, হলে হয়তো বর্তমান সময়ের ছবি আরও ভালো করে আমরা দেখতে পেতাম। আজ বিশ্ব শিশু শ্রম বিরোধী দিবসে আমরা এই বিষয়ে আরও অবগত হই, মানুষকে বোঝাই, এবং যেন নিজেরা এই ঘৃণ্য অপরাধ থেকে বিরত থাকি।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, ভারত সরকারের Integrated Child Protection Scheme (ICPS) ভারতবর্ষের প্রতিটি শিশুর সুস্থ শৈশব সরকারিভাবে সুনিশ্চিত করে।

References:
- https://www.ilo.org/newdelhi/whatwedo/publications/WCMS_557089/lang–en/index.htm#:~:text=As%20per%20Census%202011%2C%20the,India%20are%20out%20of%20school.
- http://qed.econ.queensu.ca/pub/faculty/sumon/basu_childlabor.pdf
- https://www.livemint.com/Politics/ZPALzwgvOLhyMfxWsobcHM/10-alarming-statistics-on-child-labour-in-India.html
- https://www.ilo.org/wcmsp5/groups/public/—asia/—ro-bangkok/—sro-new_delhi/documents/publication/wcms_557089.pdf