ছোটোবেলায় আঁকার খাতায় রঙ পেনসিল বুলিয়ে কত ছবিই না এঁকেছি। পাখি, ফুল, লতা, পাতায় খাতার পাতার পর পাতা ভরিয়েছি। আবার দেওয়ালে রঙের আঁচড় কাটার জন্য বড়োদের চোখ রাঙানিও দেখেছি। তারপর কত শীত-বসন্ত চলে গেছে। সে দেওয়ালের রঙ প্লাসটার অফ প্যারিসে ঢেকে গেছে, রয়ে গেছে স্মৃতি। আর গোপালডিহির মানুষজন?

তারা কি আজও ওই স্মৃতিটাকে বাঁচিয়ে রেখেছে? শুধু গোপালডিহি কেন? পুরুলিয়ার আনাচ কানাচের ঘর-দুয়ারে রঙের ফাগুন। মানভূমী ভাষায় ‘ডি’ বা ‘ডিহি’ মানে ছোটো গ্রাম। সকালের নিকোনো উঠোন রোদ এসে স্নান করিয়ে যায়, সদর দ্বারের উপর ধানের ছড়া অতিথিদের আপ্যায়ন জানায়। নিজের হাতে রঙ তৈরি করেছে এ দেশের মানুষ, মকর সংক্রান্তির বাঁধনা পরবের আগে।

দেওয়াল জুড়ে রামধনুর চ্ছটা। খড়ের চালা হোক, টিনের বা খাপরার, প্রতিটা বাড়ীর কারিগর যেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা। লাজুক বঁধূর চাহনি জুড়ে সংসার,স্বামী, আর সন্তানের ‘দুধে ভাতে’ থাকার বাসনা। আন্তরিক সে মানুষগুলি খুশীর জোয়ারে ভাসতে ভাসতে ওই রঙিন চার দেওয়ালকে দেখালো। আঙুলের যাদু তে বশ হয়ে কেমন হারিয়ে গিয়েছিলাম।

রুক্ষ দেশে মানুষের হাতে কেমন কোমলতা। রাতে ঘরে ঘরে হ্যারিকেনের আলো আঁধারির মাঝেও ঝলমলে রঙের আবেশ মাখা ক্যানভাস। কোনো কোনো দেওয়ালে রঙের উপর গাছের পাতার ছায়া আলপনা বুলিয়ে গেছে। এ ঘর জুড়ে শুধুই জ্যামিতির ত্রিভূজ, চর্তুভূজ, নয়তো পরিবেশ বিজ্ঞানের গাছ, ফুলের ক্লাস চলছে। প্রজাপতির রঙিন পাখার মতো এ দেশের বাড়ীই আমার রঙের উৎসব।







লেখক পরিচিতি :- সুকন্যা দত্ত ব্যারাকপুরের নিবাসী, পেশায় হাই স্কুলের শিক্ষিকা।
Copyright © Kothabriksha 2020, All rights reserved