বিষ মুক্ত তেল – সম্রাট ব্যানার্জি

“কোল্ড প্রেসড অয়েল/তেল” অনেকেই শুনেছেন/পড়েছেন, আবার অনেকেই শোনেন নি, জানেনও না! আসুন বিষয়টা সামান্য একটু আলোচনা করি।
সবার আগে বলতে চাই কোল্ড প্রেসড তেল যাঁরা নিয়মিত ব্যবহার করেন তাঁদের হার্ট কিন্তু বহুজাতিক কোম্পানির রিফাইন্ড তেলের বিজ্ঞাপনের চেয়ে অনেক বেশি “জওয়ান” থাকে! কিভাবে? আসুন দেখি। সর্ষে, তিল, বাদাম ইত্যাদি তৈলবীজ থেকে উচ্চ চাপের মাধ্যমে যখন তেল নিষ্কাশন করা হয় তখন সেটাকে বলা হয় কোল্ড প্রেসড অয়েল/তেল। আগে যখন গ্রামীন ভারতে গোরুর ঘানি ব্যবহার করে বীজ থেকে তেল নিষ্কাশনের কাজ করা হতো সেটাও ছিল কোল্ড প্রেসড তেল। এখনও গ্রাম বা শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে পুরোনো কিছু ঘানি আছে। নোংরা, তেল চিটচিটে পরিবেশে, বদ্ধ ঘরে হলেও আছে! কিন্তু এই তেল “কোল্ড” কেন? উত্তর হলো শুধুমাত্র চাপের সাহায্য নিয়েই এই পদ্ধতিতে বীজ থেকে তেল নিষ্কাশন করা হয়, বাইরে থেকে কোনও তাপ প্রয়োগ করা হয় না, যার ফলে বীজের মধ্যে থাকা যাবতীয় পুষ্টিগুণ বজায় থাকে। এই পদ্ধতিতে তেল নিষ্কাশনের সময় তেলের তাপমাত্রা কখনও ৪০ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড ছাড়ায় না। আরো একটা বিশেষ ব্যাপার হলো কোল্ড প্রেসড তেল রিফাইন্ড তেলের থেকে সবদিক থেকেই ভালো। কিন্তু কেন ভালো? জটিল রাসায়নিক ব্যাখ্যার মধ্যে না ঢুকে অত্যন্ত সহজে বোঝানোর চেষ্টা করছি। উচ্চ তাপে বা রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে যে ভোজ্য তেল বর্তমানে তৈরি করা হয় তার পদ্ধতির নাম হলো সলভেন্ট পদ্ধতি(গুগল সার্চ করলেই পুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে)। এই পদ্ধতিতে বীজ থেকে তেল নিষ্কাশন করলে কিছুটা হলেও বেশি তেল তৈলবীজ(যেমন সর্ষে) থেকে পাওয়া যায়, এটা সত্যি। কিন্তু ওই কিছুটা তেল বেশি পেতে গিয়ে আপনি আপনার শরীরে মারাত্মক ক্ষতিকর কিছু রাসায়নিক পদার্থ নিয়মিত চালান করছেন। এরকমই একটি রাসায়নিক হলো হেক্সিন, এটি একটি পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ।
এবার বলি কোল্ড প্রেসড তেলকে আপনি চাইলে একবার ফিল্টার করতে পারেন, দুবার করলেও কোনও ক্ষতি নেই। এই তেল ১০০% খাঁটি তাই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সুস্থ রাখার কাজ করে। মোটামুটি সাড়ে তিন কিলোগ্রাম সর্ষের বীজ থেকে এক লিটার কোল্ড প্রেসড সর্ষের তেল উৎপাদন করা যায়। কিন্তু সলভেন্ট পদ্ধতিতে খুব বেশি হলে তিন কিলোগ্রাম তৈলবীজ থেকেই এক লিটার সর্ষের তেল পাওয়া যায়। তাই স্বাভাবিক ভাবেই কোল্ড প্রেসড তেলের উৎপাদন খরচ বেশি, তাই বিক্রয় মূল্যও বেশি। তবে তা অন্য দিক দিয়ে সংসারের বাড়তি খরচ কমায়। একটি সংসারে রান্নায় সারা মাসে যদি চার লিটার রিফাইন্ড তেল লাগে কোল্ড প্রেসড তেল সেখানে কোনোভাবেই তিন লিটারের বেশি লাগবে না। কারন কোল্ড প্রেসড তেল রিফাইন্ড তেলের তুলনায় অনেক গাঢ় হয় এবং খাবারে কম মিশে যায়। এছাড়াও কোল্ড প্রেসড তেলের আরো অনেক গুন আছে যেগুলো নিয়ে আমরা পরে নিশ্চই আলোচনা করবো।
তবে একটা কথা বলে রাখি, কোল্ড প্রেসড সর্ষের তেল দেখতে ভালো নয়(ব্র্যান্ডেড রিফাইন্ড তেলের তুলনায়) এবং চোখ জ্বালানি ঝাঁঝও হয় না এই তেলে!
বন্ধুরা, আপনারা যেদিন জেনে যাবেন ব্র্যান্ডেড সর্ষের তেলে চোখ জ্বালানি ঝাঁঝ কিভাবে তৈরি করা হয় মনে হয় সেদিন থেকেই কোল্ড প্রেসড বা পাড়ার ঘানির তেলে ফিরে যাবেন।

তেল তৈরির পদ্ধতি

লেখক পরিচিতি : সম্রাট ব্যানার্জি একজন চাষী।
বিগত কয়েক বছর ধরে বিষমুক্ত খাদ্য, বিশেষ করে ভোজ্যতেল নিয়েই কাজ করে চলেছেন।
পূর্ব বর্ধমান জেলার সিঙি(সিঙ্গি) গ্রামে স্থানীয় কিছু পরিশ্রমী মানুষকে সাথে নিয়ে এই ধরনের কাজ করেন। তাঁর নিজের বাড়িটা বর্তমানে একটা হোমস্টে। সেখানে যাঁরা বেড়াতে যান তাঁদের পাতে বিষমুক্ত খাদ্য তুলে দেওয়ার ওঁর একমাত্র প্রচেষ্টা।

All rights reserved © Kothabriksha 2020

2 Comments Add yours

  1. Anindya says:

    অনেক ধন্যবাদ তথ্য সমৃদ্ধ এই লেখার জন্য

    Like

    1. আপনাকে অনেক ধন্যবাদ পড়ে জানানোর জন্য। আমাদের কে লেখা পাঠাবেন kothabriksha@gmail.com এই মেলা আইডি তে

      Like

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.