কথাবৃক্ষ শারদীয়া সংখ্যা – সম্পাদকীয়

কথাবৃক্ষ শারদীয়া সংখ্যা – আচ্ছা, এই তিন শব্দ আমাদের মনে ঠিক কোন ছবিটা তৈরি করছে? এই বছরে অতিমারীর আতঙ্কে গুমরে ভয় পেয়ে থাকার বা জীবনবিমুখ হয়ে যাওয়ার ছবি, নাকি সৃষ্টির মাধ্যমে জীবনের শক্তি কে ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্তরে ধারণ করার ছবি? জীবনের এক অবাধ উদ্দম ও লড়াইয়ের ক্ষমতা কে আমাদের হাতিয়ার করে এগিয়ে যাওয়ার সময় কি আসেনি? কথায় বলে ‘The pen is mightier than the sword’, সত্যি কি এখনো মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময় আসেনি? হাথরস এবং তারপর বলরামপুরে ঘটে যাওয়া ঘৃণ্য ও পৈশাচিক ঘটনা কি আজও এই দেশে প্রতিনিয়ত ঘটে যেতে থাকবে? বন্দুক না তুলি কলমও কি আমরা তুলবো না? আপামর বাঙালির কাছে পুজো সংখ্যা’র একটি ঐতিহাসিক পরম্পরা ও সমষ্টিগত মননে একটি বিশেষ ভালোবাসার জায়গা রয়েছে। সেই পরম্পরায় ও সাংস্কৃতিক গঠনের মধ্যেই ছোট ছোট দৈনন্দিন জীবনের অনুভূতি থেকে বিপ্লবের ডাক, অভিমানে রাঙা প্রেম থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার সবটাই আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। পুজো সংখ্যা আমাদের স্বপ্ন দেখতে শেখায়, বেঁধে বেঁধে থাকতে শেখায়, অনাবিল আনন্দ কে শিকড়ের সাথে মিলিয়ে যাপন করতে শেখায়, আর বন্ধু হতে শেখায়, পাশে দাঁড়াতে শেখায়।

তাই এবার আমরা ঠিক করলাম ‘কথাবৃক্ষ’ই বা এই পরম্পরা থেকে বাদ যায় কেন, সেই কারণেই এই বিশেষ শারদীয়া সংখ্যা। যেখানে সবাই খুঁজে পাবে নিজের কথা বলার একটা প্ল্যাটফর্ম। শুধুমাত্র কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গ থেকেই নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সকল মানুষকে এই  উৎসবে আমরা এক করতে চাই ‘কথাবৃক্ষ’র ছায়ায়। এই পথ চলায়  কলকাতার পাশাপাশি কানাডা আবার কানাডার পাশাপাশি কুমিল্লাও আছে হাতে হাত ধরে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। আসলে যে কোনো উৎসবেই সকলের সমান অধিকার আছে। যদিও এবারের উৎসব একটু অন্যরকম, সেখানে অন্যবারের মতো প্যান্ডেলের ধুমধাম নেই, কেনাকাটার ভিড় নেই – তাই আসুন না এই বছরের শারদীয়া কে আমরা মনের সাথে মনের ছন্দ বেঁধে পালন করি।

ছন্দের কথা ধরে চলে আসে একটি বাদ্যযন্ত্রের কথা যা আমাদের বেঁধে থাকতে শেখায়, ঢাক। একটি তাল বাদ্য, ছন্দ তৈরি করে। অনেক রকমের ছন্দ (Infinite rhythmic patterns)। সব দেবতার শক্তি দিয়ে সৃষ্টি হয়েছিলেন মা দুর্গা, তাই জগৎ সংসারের প্রতিটা ছন্দে গন্ধে সুরে আনন্দে মা দুর্গা রয়েছেন। এইখানেই আমাদের ঘরের মেয়ের গল্প মিলছে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সেই লক্ষকোটি গল্পের সাথে এবং আলো হয়ে ফিরে আসছে আমাদের কাছে। মিশিও কাকু (পদার্থ বিজ্ঞানী) বলেছেন, ‘the universe is a symphony of vibrating strings’, তাই দেখা যায় যে যখন অনেক গুলো যন্ত্র একসাথে বাজে (কল্পনা করা যাক হাজার টা ঢাক বাজছে) তখন অনুরণন তৈরি হয়। সুরের সাথে সুরের, ছন্দের সাথে ছন্দের, মনের সাথে মননের। এই অনুরণন ভালো লাগার ও ভালোবাসার, যা লেখার সুরেও আমরা পরখ করতে চাই।

পুজোর গান বা শারদীয়া সংখ্যা – এ তো নতুন কিছু নয়, তবে আজকের দ্রুতগতির জীবনে এইসব প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে – কেমন তাল কেটে গেছে, ছন্দ হারিয়েছে পৃথিবী। সেই কারণে আমরা ‘পুরনো চাল ভাতে বাড়ে’ এই প্রবাদটি মনে রেখে এবং বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের আদি ছন্দে ফিরে মনের সাথে মননের দেখা করাবো বলে এবারে নেমে পড়লাম এই শারদীয়ার সংখ্যার প্রকাশনায়। বাইরে বেরিয়ে ভিড়ে ঠেলাঠেলি করে গড়িয়াহাট বা হাতিবাগানে; জামাটা, শাড়িটা – তার সাথে ম্যাচিং জুতো বা কানের দুল কিছুই যখন হলো না। তখন সেই অভাবটুকুনি আমরা পূরণ করে নিতে চাইলাম এইভাবেই, যেখানে আমরা স্বপ্ন দেখবো, সেই স্বপ্নেই বাসা বাঁধবো। পুজোর গন্ধ ঘ্রানে ভরে, মনের স্পন্দনের সাথে ঢাকের কাঠির তাল মিলিয়ে এই উৎসবকে আমরা দেখব আগামীর শুভ সূচনা হিসেবে। সেই শুভসূচনায় আসুন মিশে যাই – কাশের গুচ্ছে, নীল আকাশের বুকে পাল তোলা সাদা মেঘের সাথেই আসুন না ভেসে চলি এই অন্ধকার থেকে আলোর উজানে।

All rights reserved © Kothabriksha 2020

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.