টিকিট
কেউ কন্ডাক্টারকে ঠকিয়ে দশটাকার টিকিট কেটে বারোটাকার দূরত্ব যায়
মেরুদন্ড যুক্ত কেউ কেউ সঠিক ভাড়া জানে, চুপচাপ ন্যায্য মূল্যে যাতায়াত করে –
আর আমারই মত বুরবাক কাউকে কাউকে কন্ডাক্টর ঠকিয়ে আট টাকার দূরত্ব পেরোতে দশটাকার টিকিট গছায়।
প্রতিবন্ধী সিটে বসা লোকটা মনে মনে হাসে-
টাকার উপরেই তাহলে নির্ভর করেনা
কে কতদূর যাবে…
প্রাক্তন
মুচকি হাসি হেসে
ভাড়া মিটিয়ে ভুল বাস থেকে নেমে আসি –
কন্ডাক্টর গালি দিয়ে পয়সা পুরে চলে যায়
বাস বাজাতে বাজাতে।
আমি গন্তব্যে পৌঁছনোর কথা ভাবতে থাকি…
মুভ অন
ঘর বদলাতে বদলাতে হাঁপিয়ে যাই আমিও –
এতবার বাসা পাল্টাই দেখে কেউ আর ভাড়া দিতেও চায়না –
ভাবে ঝগড়ুটে ভাড়াটে, অথবা স্ক্যান্ডাল আছে অনেক,
নির্ঘাৎ বকেয়া রাখা অভ্যেস –
কেউ কি বুঝবে কখনো, আমি আসলে বাড়ি নয়,
খুঁজছি সদালাপী এক বাড়িওয়ালা –
যিনি হেসে আমায় বলবেন – ‘আরে ছিছি । আগে একটু জমিয়ে বসুন দেখি। অগ্রিম দিতে হবে না, তিনমাস পর যা হোক
কিছু দেবেন না হয়…. ‘
আর উত্তরে যাকে হেসে আমি বলবো – ‘এই নিন ছয় মাসের অগ্রিম ভাড়া বাবদ ।
আমায় শুধু ইচ্ছেমত পালাতে দেবেন প্লিজ …’
ঘুম
না জানিয়েই একদিন হাজির হবো,
তোমার দরজায়, বারবার কলিংবেল টিপে
মাথা খারাপ করে দেব বাড়ির সবার-
তুমি আদরে ডেকে নিয়ে বসিও,
আলাপ করিয়ে দিও মা বাবা আর বুদ্ধিমতী নানীর সঙ্গে –
নিজে হাতে মুড়ি মেখে এনো, টক ঝাল চানাচুর আর তেল পেয়াজ আদা লঙ্কা দিয়ে, সঙ্গে গরম ফুলুরি..
এসব অনুষঙ্গ নিয়ে আমি বসবো, খালি হাতে,
আমার দেওয়ার কিচ্ছু নেই বলে দু হাত ভরে ভালোবাসা কুড়িয়ে জমা করবো পকেটে…
হাসিতে তুমি ভরিয়ে রেখো সেইসব মুহূর্ত
জানি, এসবই স্বপ্নদৃশ্য,
আসলে জীবন এক সুদীর্ঘ ঘুম..
দূরত্ব
নিছক গাণিতিক নয় এই দূরত্ব –
দুটো আলাদা শহর-
কষ্টসাধ্য যাতায়াত, কমিউনিকেশন –
মাঝখানে উপড়ে আছে কত কত টেলিফোনের টাওয়ার
কথা কেটে যায়, হ্যালো, শোনা যায় না
ব্যাটারি ফুরিয়ে ক্রমে নিভে যায় ফোন –
তবু রোজ,
দূরত্বের নরম বিছানায়, দুটি শহর জাগে,
আর
ধ্রুবতারা জড়িয়ে ঘুমোয় দুজনের মন…
লেখক পরিচিতি : রূপময় ভট্টাচার্য। বর্তমানে সরকারি চাকুরিজীবী। কবিতা,গল্প আর নাটক নিয়েই অবসর কাটে।
প্রচ্ছদ : অনির্বাণ পাল
Copyright © Kothabriksha 2020, All Rights Reserved.