লাল, নীল, কালো। তিন দোয়াতে তিন কালি। একটি ড্রপার। একটি বাতিল সাদা রুমাল। এখন দেখলে বাটিক মনে হয় তিনরঙা ছোপে।
https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js
আমি ঝর্ণা কলমে লিখি। নামি দামি ব্র্যান্ডেড নয়। ধর্মতলায় চক্কর কাটতে কাটতে তিনটে সাধারণ কলম জোগাড় করেছিলাম। ড্রপার দিয়ে কালি ভরতে হয়। হাতে কালি লাগে। আমি সেটাই চাই। আমার বালকবেলা। সত্যি আমি।
ছয়ের দশক। পেন্সিল ছেড়ে কলম। হাতে ঘড়ি, বুকে পেন – ওসবের বেশ দেরী। এক ধরণের বড়ি পাওয়া যেত পাড়ার দোকানে। জলে গুললে নীল। আর সরু লম্বা কাঠের হাতল। সস্তার নিব গুঁজে দাও, কালিতে ডোবাও, কাগজে লেখো। আর ছিল ব্লটিং পেপার। টপটপ করে কালি পড়ত। আহা, সব মিলিয়ে হয় প্রাচীন গুহাচিত্র নয় মডার্ন আর্ট। আদতে কি লিখেছি বোঝা অসম্ভব। পরিচ্ছন্নতার জন্য পুরো নম্বরটাই কাটা।
আরেকটু বড় হয়েছি। ছোটরা দাদা বলে স্কুলে। পরীক্ষা দিই কলমে লিখে। একটা কলম বরাদ্দ। যত্ন আত্তি করতে হয়। রাতে ভাল করে চুবিয়ে রাখা। রাবার পুড়িয়ে লিক সামলানো। আরেকটা কলম মায়ের জিম্মায়। শুধু পরীক্ষা দেওয়ার সময় হাতে আসত আবার কাজ শেষে ফেরত। মধ্যবিত্ত সংসারের অভিধানে বিলাসিতা, অপচয়, আস্কারা শব্দগুলো ছাপা থাকতো না তখন।
গোঁফের হালকা রেখা আয়নায় ধরা পড়েছে। হাফ প্যান্ট ছেড়ে ফুল প্যান্ট। বলিয়ে কইয়ে সহপাঠী হাতে লম্বা প্লাস্টিক ধরিয়ে দিয়ে বলল…’লিখে দেখ’। সেই প্রথম ডট পেন চোখে দেখা। কালি ফুরোলে রিফিল। স্যার বলতেন ওসবে লিখলে হাতের লেখার বারোটা বাজবে। তাবলে নিষিদ্ধ বস্তুর ওপর টান এড়ানো যায় কই…
সেই বন্ধু নতুন মডেলের ডট পেন নিয়ে হাজির। লিখে দেখ ফরমান দিতেই… আরে কি মোলায়েম..! কালি ফুরোলে রিফিল ভরার ফুটো নেই যে। বন্ধু বলল এটা লেটেস্ট। কালি শেষ, কলম বাতিল। USE AND THROW…
বিশ্ব সঙ্কট। ছেলে মেয়ে, তাদের বাবা মাকে… ভাই বোন কে…. বোন, ভাইকে… বন্ধু… বন্ধুকে…

লেখক পরিচিতি :- দেবাশিস বসু বেতার ও দূরদর্শন খ্যাত স্বনামধন্য বাচিক শিল্পী, কবি, সুলেখক ও অভিনেতা।
Copyright © Kothabriksha 2021, All Rights Reserved.