মন, ও মন তুই কোথায় গেলি? তোকে দেখতে পাচ্ছি না কেন? এত নিকষ ঘন আঁধার চারদিক, সেই বা কেন?
আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না! মন-কেও হারিয়ে ফেলেছি৷ এই অন্ধকার রাতে তাকে খুঁজবই বা কি করে? কোথাও পথ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না৷ আঁধারের এমন রূপ আগে তো কখনো দেখিনি! এমনই হয় বুঝি! এমন ঘন অন্ধকারে পথ খোঁজার উপায়টাই বা কি? আচ্ছা, এই দিকের আকাশটায় কিছু তারা তবু মিট্মিট্ করছে৷ কেমন গগনভরা বিষণ্ণতায় চেয়ে আছে তারাগুলো আমার দিকে৷ ঘোড়ার খুরের ধুলো উড়িয়েই এগিয়ে চলেছিল মন৷ তবে এইভাবে হারিয়ে গেল কি করে? এই মন একটু অপেক্ষা করো, হঠাৎ একটা ক্ষীণ শব্দ কানে এল মনে হচ্ছে৷ আরেকটু কান পেতে শোনা যাক্৷ আওয়াজটা কোন্ দিক থেকে আসছে৷ হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছি৷ ‘মন’ তুমি কোথায়? যদি আমার ডাক শুনতে পাও, সাড়া দাও৷
পায়ে কি যেন ঠেকল, চমকে উঠতে হল৷ এ কি! এ কে কাঁদে? ‘মন’— তো! হ্যাঁ, হ্যাঁ ঠিকই শুনছি৷ আচ্ছা ‘মন’, তুমি এখানে এভাবে পৌঁছালে কিভাবে? কেমন করে? আর কাঁদছই বা কেন? কোনোদিন তোমায় এভাবে কাঁদতে দেখিনি তো!
আরো আরো গলা শুনতে পাচ্ছি মনে হচ্ছে৷ কে ভাই ওখানে? ওখানে কে কথা বলছ? বোধক? হ্যাঁ, আমি বোধক৷ তুমি কিভাবে জানতে বোধক যে আমি এখানে?
বোধক : জানিনি তো ‘মন’ যে তুমি এখানে৷ আমি তো দেখেছিলাম তুমি সেই কোন্ নবীন প্রাচীন থেকে জেগে উঠেছ, আর অতি ক্ষিপ্রতায় এগিয়ে চলেছ৷ তবে আজ কেন তোমার চোখে জল? পলে পলে, যুগে যুগে, কালে কালে তুমি এগিয়ে চলেছ সৃষ্টির কর্ষণ ও জয়গান করতে করতে৷
মন : হ্যাঁ ভাই বোধক ঠিকই বলেছ তুমি৷ সেই সেদিন যাত্রা করেছিলাম। সেই দিনটা ছিল দিনের ক্ষীণ আলোয় মায়াবীর রাত৷ জ্যোতিষ্কমণ্ডলীর তারা ভরা আলো ছিল৷ সেই অবেলায়, সকালেই শুরু হয়েছিল আমার যাত্রা৷ সেই পরিবেশকে দেখে মনে হয়নি কোনো প্রতিকূলতা আছে বলে৷ নিজের সৃষ্টির আনন্দে পার করেছি এক একটি সকাল, সন্ধিক্ষণ বটে৷ বাঁশি বাজিয়ে, আওয়াজ করে কত তেজ, কত দর্পে সূচনা ছিল সেই যাত্রার৷ আপন আলোর দীপ্তিতে এগিয়ে চলেছিলাম কত হাঁক ডাক করে, হন্ হন্ করে৷ কত মাঠ, কত বন, জঙ্গল, নদী-নালা, গ্রাম, শহর, মন্দির, মসজিদ, কুটীর, ইমারত যেন বাঘে তাড়া করা হরিণের পালের মত ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটেছি৷ এমন বিশ্বের ডাকে সাড়া দিয়েই ভেবেছিলাম চিনেছি বুঝি আঁধারে আলোক৷

বোধক : কিন্তু এই আঁধারে বেরলে কি করে? বারণ করেনি কেউ?
মন : সকলেই পরামর্শ দিয়েছিল না যাওয়ার৷ আর কালের কথা বলছ? সেই কুমন্ত্রা তারাগুলো? অনেকগুলো ঈর্ষাপরায়ণ তারা আছে, তারা বাধা দিতে এসেছিল। নিশানাও দিয়েছিল বটে, সামনের চলার পথ খুব অন্ধকারময়৷ কিন্তু আমি তো ওদের কাছে হার মানবার মানুষ নই৷ আপন আলো জ্বেলে, আপন মহিমায় দীপ্ত হয়েই তো চলেছিলাম একা৷ সে চলা, ছিল গর্ব ভরে চলা৷ রঙীন স্বপ্নে ভেসে ভেসে, ধুলোর ঝড় উড়িয়ে আকাশে, চারিদিক ধুলোয় ধুলোময় করে এগিয়ে চলা৷ সেই মায়াবিনীর হাতছানিতে যতই এগিয়েছি ততই আলো-ছায়ার খেলা – অনাবশ্যক ভাবে – পরিবর্তনের দরকার বলে জানিয়েছে৷ অথচ দেখো, সেই অসাড় মনই ত বারবার ছট্ফট্ করতে করতে বলেছে ‘আরো চলো, আরো চলো’৷ বোধক, সেই চলাই যে আমাকে করে তুলেছে অসাড়, অন্তঃসার শূন্য৷
বোধক : হঠাৎ এ কথা তোমার মনে হল কেন – মন?
মন : বিশ্ব-প্রকৃতির নির্বাক অন্ধকার যে আলোর শূন্যতাকে ভরে রেখেছিল তারার আলোয় ভরে, সেই সবার প্রথম বাধ সেধেছে৷ আপন আলোর উজ্জ্বলতায় চোখে লেগেছে ধাঁধা৷ যা ছিল আপাতঃ স্পষ্ট তা আজ হয়ে উঠেছে সম্পূর্ণ বাধা৷ তখন সে, ভাবনার ভুলে বারবার বাইরের পথে বেরিয়ে ভুলেছিলুম যে – বাইরের পথে বাধা ঠেকেই, দরজা যদি বাইরের-মুখী হয় তা মাঝে মাঝে বন্ধ হবেই৷ আর এই বাইরের থেকে বাধা আসলে তার ফর্দ্দটা লম্বা করে খুঁতখুঁত, ছট্ফট্ করে অকৃতজ্ঞ, চঞ্চল হয়েছি মাত্র৷
বোধক : তবে এখন কেন তোমার চোখে জল?
মন : বোধক, আজ যখন মায়ার জালে মাতোয়ারা হয়ে নিজের জয় বাণী ঘোষণা করতে উদ্দ্যত হই তখন সেই আধো বাধো অন্ধকারে দীপ্ত শিখা বাতাসের ঝটকায় যায় নিবে৷ আর সঙ্গে সঙ্গে আমার চোখের ধাঁধা কেটে গিয়ে দেখতে পাই বিশ্বপতির আলোর ঝলকানি৷
বোধক, এই যে দেখছ এই কান্না – এ আনন্দাশ্রু৷ আপন দীপ্ত শিখা অন্ধ করেই রেখেছিল একরকম৷ প্রশান্ত চিত্ত নক্ষত্রমণ্ডল যেন নম্রভাবে স্পর্শ করল৷ সেই বিশ্বপতির অমৃতলোক থেকে আনন্দজ্যোতিই যেন আমার সমস্ত শক্তিকে এক লহমায় শূন্য করে দিয়ে পূর্ণতায় ভরিয়ে দিল৷ আকাশ পথেই এলো সেই আশীর্বচন।
‘তুমি আপনার ইচ্ছাকে একান্ত তীব্র করে চিত্তকে কাঙাল বৃত্তিতে দীক্ষিত কোরো না৷ বাইরের কাছ থেকে ভিক্ষা চাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করো৷’
বোধক : তবে এখন কি করবে ভাবছ?
মন : এখন পেয়েছি আমার আদিকালের কবির মন্ত্র৷ সেই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছি৷ বিধাতার সকল দান অন্তরের মধ্যে নম্রভাবে গ্রহণ করব৷ অবিচল থাকব৷
বোধক : আর তোমার সেই বিশ্বজনীনতা? তার কি দশা হবে ভেবে দেখেছ?
মন : সে কাজ তো থাকবেই আমার বোধক৷ আরো ভালো করে যাতে হয় সেই ডাকই তো পেলাম৷ তাই তো এই আনন্দাশ্রু৷ বাইরে না ছুটে নিজের ঘরেই গড়ে তুলব সমগ্র বিশ্বের যোগসূত্রের সূত্রধর৷ এইখানেই সর্বজাতিক মনুষ্যত্ব চর্চার কেন্দ্র স্থাপন করব৷ সংকীর্ণতার যুগ শেষ করে বিশ্বজাতিক মহামিলন যজ্ঞের প্রতিষ্ঠা করব৷
‘হঠাৎ দেখি কখন পিছু পিছু
এসেছে মোর চিরপথের সাথি৷’

Adhunik Bangla Gan Ambika Ghosh benaras Bengal bengali short story coronavirus Dakshinee dreams Durga Puja Emotions folk culture Himalaya History of Indian Music India indian politics Kashmir Kobita kolkata kothabriksha kothabriksha editorial lockdown Music Nature nilimesh ray Pratyay Pratyay Raha pritam chowdhury pujo shonkhya Rabindranath Rabindranath Tagore Rabindrasangeet Religion Sayandeep Paul sharodiya shonkhya shortstory society Srabanti Sen Stories Subha Guha Thakurta Sustainable Travel Suvo Guha Thakurta Theatre travel west bengal World Environment Day
- September 2022
- July 2022
- June 2022
- March 2022
- October 2021
- September 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- November 2020
- October 2020
- September 2020
- August 2020
- July 2020
- June 2020
- May 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019