তার হাতে ছিল হাসির ফুলের হার
পর্যায়: প্রেম
উপপর্যায়: প্রেমবৈচিত্ৰ
এই গানের মধ্যে দেখতে পাই দুজনকে এক আমি এবং দুই কোন এমন একজন, যার অপরূপ সৌন্দর্যের কথা বার বার বর্ণিত হয় আমার প্রেম বৈচিত্রে। দুজনের এক অদৃশ্য যাত্রাই যেন এই গানের উপজীব্য বিষয়।
এই গান যেন এক স্বপ্ন লব্ধ অনুভূতি। সমস্ত দৃশ্যই যেন এক স্বপ্নের পূর্ন অংশ। তার হাতে ছিল এমন হার যা হাসির ফুল দিয়ে তৈরী। বিভিন্ন রঙে তা রঙিন। এ কেমন ফুল? এ কেমন ই বা হার? আর আমার কাছে? আমার কাছে আছে দুঃখের ফলের ভার। হাসির ফুল আর দুঃখের ফল এ কেমন জিনিস? হাসির যদি ফুল হয় তবে দুঃখের ও ফুল হওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু ফুলের পূর্ণতা ফলে। তাই বুঝতে পারি আমার দুঃখ এখন এক সম্পূর্ণ অস্তিত্ব ধারণ করেছে, যা ফুলের রঙ রূপ অতিক্রম করে ফলের ভার এ পরিণত হয়েছে। ফলের নির্যাসে আছে অশ্রু। কার জন্য সাজিয়েছি এই ডালা? এই জীবনপাত্র ভোরে আমরা দুজনেই চলেছি কোন অপার্থিব ঠিকানায়।
কিন্তু যাত্রা পথেই সেই সুন্দর মানুষ এসে বদল করতে চাইল আমাদের উভয়ের উপার্জিত অর্ঘ্য। সে বলছে ‘এসো এসো না বদল করি’। এতক্ষনে যেন এই রঙিন ডালা অতিক্রম করে আমার দৃষ্টি পড়ছে তার উপর। সে বাইরে যেমন সুন্দর তেমন ই আমার চোখ যখন তার শ্রী কে বর্ণনা করলো আমি বললাম সে ‘নিদয়া’। কারণ হতে পারে দুটি। এক আমার চোখে তার সৌন্দর্য এমন অপরূপ যে আমি তার রূপের নাগাল না পেয়ে তাকে দয়াহীন বললাম বা দুই আমি শুধু তার বাইরের রূপে আটকে না থেকে প্রবেশ করছি তার অন্তরে আর দেখতে পাচ্ছি এক দয়াহীন মনোহরা কে। কোন কিছু না বলেই যেন সে তুলে নিল আমার সঞ্চয়,আমার বাদলের মেঘের মতো রসস্থ দুঃখ কে। তার কৌতুক চাহনি যেন তুলে আনলো কোন লুকানো তথ্য। আর আমি বুকে তুলে নিলাম তার ফাল্গুনী সঞ্চয়। বদল কাজ শেষ করে সেই সুন্দরী যেন যেতে যেতে ঘোষণা করলো নিজের বিজয়। দূরে যেতে যেতে বলল ‘মোর হল জয়’। আর আমি এই নব ফাল্গুন দিন বুকে নিয়ে বসে রইলাম।
দিনের শেষে যখন সন্ধ্যা এল, দেখলাম দুঃখের ফলের সঞ্চিত বেদনার মতো তা সঞ্চয় হয়ে থেকে যায়নি আমার কাছে। যা কিছু নিষ্ঠুর যা কিছু অসুন্দর এমন ‘তপ্ত দিন’কে সহ্য করার শক্তি সেই হাসির ফুলে নেই। দুঃখের ব্যাথা, অশ্রুতেই পরিপূর্ণতা পায় আমার অর্ঘ্য। আমার নিজেকে চেনা বা তাঁকে চেনার এই খেলায় দুঃখই আমার সঞ্চিত ভরসা। তাই এই ঝরা ফুলের অসম্পূর্ন মালায় শেষ হলো আমার স্বপ্ন। রঙিন কিছু হাসির ফুল যা আমার আকর্ষণ হয়ে দেখা দিয়েছিলো গানের প্রথমে তা যে কখনো সেই অভীষ্ট লক্ষ্যের অর্ঘ্য হতে পারে না। তাই তা ঝরে গেলো। দুঃখ দিয়েই যে আমার ডালা সম্পূর্ণ হবে। দুঃখ দিয়েই যে তোমায় দেখবো, সম্পূর্ণ হবে তোমায় পাওয়া।