কৈলাশে কোয়ারেন্টাইন – জয় নন্দী

(১)

উমা: তোমার চ্যালা দুটো কবে থেকে আসবে কিছু বলেছে?

মহাদেব: মাল ফুরোলেই সুরসুর করে এসে পড়বে। বাইরে বেরোলেই তো ইন্দ্রের পোষা খচ্চরগুলো পোঁ…পিছনে ব্যাটম দিচ্ছে। কথা নেই-বার্তা নেই বোমহাও লকডাউনটা সার্পোট করল- নিজের কথা না ভাবিস, বুড়ো শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর দিকে একবার তাকা। স্বগ্গে ওইসব ভাইরাস-টাইরাস আসবে না, আমাদের এখানে কার ফরেন হিস্ট্রি আছে বলোতো?

উমা: মর্ত্যে যাতায়াত লেগেই আছে। সরস্বতী জানুয়ারীতে ফিরেছে- ওই মেয়েটাকে নিয়েই চিন্তা- সব জায়গায় ভিজিট করতে হয়, লক্ষ্মী তাও না হয় বাড়ি-বাড়ি কভার করে। ( সামান্য গলা তুলে) কাকে আর বলছি, তুমি নিজেই গেল সপ্তায় নীল ষষ্ঠী সেরে এলে।

মহাদেব: গেছিলাম বলেই এই কদ্দিনের জোগাড়যন্ত হল, না হলে খেতে কি?


উমা আর কথা বাড়ায় না। বারান্দা থেকে গামছাটা নিয়ে কলতলার দিকে এগোলেন। মহাদেবের পোষা মোষটা তাকে দেখে দু’বার ডাক দিল- হয়ত খিদে পেয়েছে। নীলষষ্ঠীতে আনা ফলগুলো গামলায় ঢেলে দিল- আগে থেকে কাটা ফল, কেউ খেত না। মনে মনে গজরাতে থাকলেন, মোষ-টোষ না পুষে একটা গরু পুষলে কাজে দিত, অন্তত সকাল-বিকেল চায়ের দুধটা ম্যানেজ হত। মহাদেব অর্ন্তযামী- উমা বিদ্রুপের হাসি শুনতে পেলেন,  ডেইলি যেন সিংহের দুধ খেয়েই ভুঁড়িটা বাড়ছে।
(২)

উমা: (সাত নম্বর হাত ধুতে ধুতে) জগন্নাথদের‌ই ভালো- বারবার হাত ধোয়ার ফ্যাচাং নেই, মুখে একটা মাস্ক লাগালেই হল। অ্যাই শুনছ, একটা ক্রিম এনো তো- চোদ্দবার হাত ধুতে ধুতে হাজা পড়ে গেল।মহাদেব: বোরোলিন নেই? দেরাজের ওপর দেখলাম যে…উমা: ওটা চ্যাটচ্যাট করে কেমন!

মহাদেব: তুমি এ কদ্দিন বরং কালীর লুকে থাকো- চারটে মাত্র হাতের ব্যাপার, সাবান-ক্রিম-সময়(ঢেকুঁর তুলে)-জল সব‌ই বেঁচে যাবে।

উমা: (মুখ বেঁকিয়ে) সেই, তোমার মতলব আমি বুঝি না ভেবেছ! সারাক্ষণ কাপড়চোপড় ছেড়ে ওনার সামনে ড্যাংডেঙিয়ে ঘুরি আর কী!

মহাদেব: এইসব আবার কখন বল্লাম?উমা: (বেশ ঝাঝিঁয়ে) তুমি কিন্তু জগদ্ধাত্রীও বলতে পারতে।
মহাদেব ত্রিনয়নধারী- ঝড়ের আগাম পূর্বাভাস তিনি পান। ঘরবন্দী জীবনে ব‌উকে চটিয়ে লাভের থেকে লোকসানটাই বেশি। উমার কাছে ঘেঁষে বলেন, বলছি,তোমার ফোনে লুডোর অ্যাপটা নামানো আছে? ভক্তগুলো ওটা নিয়েই ইদানীং মেতে আছে। রাতে না হয় আমরাও একদান লুডোই খেলি।


(৩)

সন্ধ্যে নামে, মর্ত্য থেকে শঙ্খের তীক্ষ্ণ আওয়াজ ভেসে আসছে- উমা ধীর পায়ে রান্নাঘরে যায়, লন্ঠন জ্বালে- সামান্য কিছু আতপ চাল পড়ে আছে, ওই ষষ্ঠীর দিন‌ই আনা- এই সপ্তাহটা চলে যাবে- এইবেলাটা ভাতে ভাত চাপিয়ে দিল।


প্রায় সমস্ত মন্দিরেই তালা ঝুলিয়েছে প্রশাসন- নিষিদ্ধ করেছে আনাগোনা, লোকজন‌ও আসে না- প্রসাদ নিবেদন‌ও বন্ধ। উমার ঘরেও অভাব- ক্যালেন্ডারের মার্চ মাসের পাতাটা হাওয়ায় উড়ছে, উমা তাকায়- পাল্টে দেয়।


অন্নপূর্ণার হাঁড়িও ধীরে ধীরে অন্নহীন।।

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.