নিয়ম – অনুষ্টুপ রাউত

জানলার শিক ধরে আহমেদ আরেকবার তার চোখের জল মুছে ফেলল। পাঁচ বছর আগে ঠিক এই দিনে নিজের প্রাণের রশিদকে হারিয়েছিল সে। হঠাৎ তাঁর বুকের ভিতরটা তোলপাড় হয়ে গেল, একজনকে পেয়ে – শান্তনু দা। তাদের পাড়ার সেই শান্তনুদা, যে নিজের কার্যসিদ্ধির আগে অবধি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছিলেন, কিন্তু পরে কথা রাখেননি। পাঁচ বছর আগে তিনিই জিতেছিলেন, এবারও তাই হবে বোঝাই যাচ্ছে। যদিও পাঁচ বছর আগের সেই ঘটনার পর থেকে আহমেদ নিজেকে সমাজ ও ক্লাব থেকে সম্পূর্ণরূপে সরিয়ে নিয়েছে।

আহমেদরা থাকে হাজী পাড়ায়। তাদের কয়েকটা বাড়ি পরেই শুরু হয় হরি পাড়া। দুই পাড়ার পার্টি অফিস এক হলেও এ পাড়ার লোকের ও পাড়ায় যাওয়া নিষেধ। সেটাই নিয়ম।
আহমেদ হুসেন হাজী পাড়ার একজন অত্যন্ত ডাকাবুকো লোক ছিলেন। পাঁচ বছর আগে পর্যন্ত শান্তনুদার ঠিক পাশেই দেখা যেত আহমেদকে। কিন্তু সেই ঘটনার পর থেকে আহমেদকে আর শান্তনুদার আশেপাশেও দেখা যায়না।
আহমেদের এক ছেলে ছিল, রশিদ। খুব মিষ্টি ছিল ছেলেটা। একদিন গরম কালের দুপুরে রশিদ গুলি-ডান্ডা খেলতে খেলতে কখন যে হরি পাড়ায় ঢুকে পড়ে সে নিজেও টের পায়নি। হরি পাড়ার লোকেরা তা দেখে চোখ দিয়ে কামান দাগতে থাকে দশ বছরের বাচ্চাটার উপর। তাদের ধৈর্যের সীমা অতিক্রান্ত হয় যখন শিশুটি খেলতে খেলতে পা দিয়ে ফেলে মন্দিরের সিঁড়িতে।


দুপুরের পর থেকে রশিদকে আর কেউ দেখেনি। বাড়ির লোকও এ নিয়ে বেশি ভাবেনি কারণ রসিদ খেলতে খেলতে মাঝে মধ্যেই অন্য পাড়ায় চলে যেত, আবার বিকেলে ফিরে আসত।
সেদিন বিকেলে হাজী পাড়ার মসজিদটার সামনে রশিদের টুকরো টুকরো করা দেহটা পাওয়া গেল, একটা চালের বস্তায়। মাথায় পাহাড় ভেঙে পড়ে আহমেদের। ছুটে যায় সে তার বাড়ির লোকের থেকেও আপন শান্তনু দার কাছে। শান্তনু দা পুলিশ ডাকেন এবং টেবিল চাপড়ে উচ্চমানের তদন্তের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরে পড়েন।
নিজের টাকার জোরে কেসটা চেপে দেন শান্তনু দা। একজনের স্বার্থে তো আর একটা গোটা পাড়াকে অসন্তুষ্ট করা যায় না, এদের উপরেই তো তার জেতা নির্ভর করছে। নাকি?
সুতরাং রশিদের নির্মম মৃত্যুর কোনও মীমাংসা হয়নি। সেই দুঃখে আহমেদ আজও চোখের জল ফেলে।
এবারও শান্তনু দাই জয়ী হবে বোঝাই যাচ্ছে। সবই হচ্ছে অথচ রশিদই ন্যায় থেকে বঞ্চিত হল। কেন? কারণ দশ বছরের শিশুটি নিয়মের বিরুদ্ধে গেছিল, এটাই তার অপরাধ। এবং এই অপরাধের একটাই শাস্তি- মৃত্যু


লেখক পরিচিতি :- অনুষ্টুপ রাউত দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি গল্প লেখা অনুষ্টুপের একটি অন্যতম শখ।

Copyright © Kothabriksha 2021, All Rights Reserved.

Leave a Reply

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.