প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় গত ৩১ আগস্ট গত হওয়ার পর, সমস্ত সংবাদমাধ্যম এবং সমস্ত সংবাদপত্রিকা-ই শ্রী মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে নানা কথা বলে এসেছেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতা, মিরিটির গ্রামের বাড়িতে তাঁর দুর্গাপুজোয় স্তোত্রপাঠ ইত্যাদি।
কিন্তু, যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি প্রায় সকল সংবাদমাধ্যমই হালকা ভাবে বলে এড়িয়ে গেছেন, তা হল ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে এই প্রাজ্ঞ মানুষটির বিচক্ষণতা। আজকে আমাদের এই আলোচনায় ভারতের গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি পদটির রাজনৈতিক ভূমিকা, এবং তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হিসেবে শ্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের পর্ব নিয়ে কথা বলব।
ভারতের সংবিধান “রাষ্ট্রপতি” এই পদটি অনেকটা ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের ‘রাজা/রানি’ -র আদলে তৈরি করে। অর্থাৎ নির্বাচন পদ্ধতি বাদ দিলে, ক্ষমতা হিসেবে বাকি সব কিছু প্রায় একই। মন্ত্রিসভা বা সংসদের অনুমোদনে সব কিছু হলেও, একটি আইন তৈরি হয়, বা সরকারি কোনো কাজ রাষ্ট্রপতির নামেই চলে। সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি পদটির কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা থাকে না, এবং রাষ্ট্রপতি ও কোনোরকম রাজনৈতিক কর্মকান্ডে তাঁর অভিমত জানান না।
ভারতের ক্ষেত্রে, যেই যেই বছর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন থাকে, সেই সেই বছর যে রাজনৈতিক দল কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকে, মোটামুটি তাদের নির্বাচিত প্রার্থীই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি মনোনীত এবং নির্বাচিত হন ২০১২ সালে, ২০১৪ সালে কংগ্রেস দিল্লিতে ক্ষমতা হারায়, ১০ বছরের লড়াইএর পর বিজেপি সমর্থিত এনডিএ সরকার গঠন করে। অর্থাৎ, এক সময় যাঁর বিরুদ্ধে সংসদের অলিন্দে আলোচনা ও উগ্র সমালোচনা করে, সেই প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরেই দিল্লি পা রাখেন বর্তমান কেন্দ্ৰীয় শাসক দল।
কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজে অনেকবার, তাঁর ভাষণে তার দিল্লিতে কাজ করার শুরুর দিকে ‘প্রণবদা’র ভূমিকার প্রশংসা করতে ছাড়েন নি। কেমন ভাবে ‘প্রণবদা’ তাঁকে ‘পিতা’-র মতো গাইড করেছেন। এটাই তো রাজধর্ম ? সরকার যে দলেরই হোক, তিনি যে পদে রয়েছেন, তাতে দলের বিভাজন করা অসাংবিধানিক। ভারতে এইরকম সাংবিধানিক পদ আরও রয়েছে। যেমন, রাজ্যের রাজ্যপাল, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি, নির্বাচন কমিশনের প্রধান।
কিন্তু, দুর্ভাগ্যের বিষয়, গতকয়েক বছর ধরে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে কিছু রাজ্যে, যাতে এই সাংবিধানিক পদে আসীন ব্যক্তিরা এমন কিছু কাজ বা মন্তব্য করছেন, যা একান্ত ভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যা আমাদের সাংবিধানিক আদর্শ ও রাজনৈতিক পরিবেশের পরিপন্থি। প্রণব মুখোপাধ্যায় এর মৃত্যুতে আমরা যে কেবল এক রাজনৈতিক স্তম্ভ হারালাম তা নয়, আমরা হারিয়েছি এমন একজন মানুষকে, যিনি যখন যে পদেই থেকেছেন, রাজধর্ম পালন করেছেন।
বর্তমানে, আমাদের দেশে তিল তিল করে ওঠা এক একটি সাংবিধানিক স্তম্ভকে আঘাত করা হচ্ছে, ক্ষমতার কেন্দ্রিকরণ এর খেলায়, আমাদের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এই দুর্দিনে আমরা সত্যিই আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির ভাষণের কথা কিছু মনে করব – Democracy is a Shared Process. Indian Democracy has been tested time and Again. Protests deepen the roots of democracy.