বিংশ শতাব্দী’র শেষের দিক থেকেই সারা বিশ্বে তথা ভারতবর্ষে একটা যুগান্তকারী পরিবর্তন আসতে শুরু করলো। পরিবর্তনের প্রধান কারণ একটা ভার্চুয়াল স্পেস, এবং আমরা প্রথম একটা শব্দ শুনলাম, ‘ইন্টারনেট’। তখন জানতামও না খায় না মাথায় দেয়, শুধু শুনলাম খুব সহজ ভাবে এক দেশে বসে অন্য দেশের মানুষের সাথে কথা বলা যাবে। এইটুকু শুনেই সকলে খুব উত্তেজিত, সকলের কাছেই ব্যাপারটা কেমন একটা উৎসবের মতো হয়ে উঠলো। ধীরে ধীরে আমরা বড় হচ্ছি, হঠাৎ শুনলাম আর একটা শব্দ ‘অর্কুট’, সেই গণ মাধ্যমে নাকি ‘স্ক্র্যাপ’ পাঠাতে হবে, কলকাতার বাঙালী বেশ উত্তেজিত। সারা শহর জুড়ে একটা হৈ হৈ ব্যাপার। যেই মানুষগুলো একটা বড় বাক্সের মধ্যে পয়সা ফেলে ট্রাঙ্ক কল করতো তারাই তখন সাইবার কাফে বা নিজের বাড়ির কম্পিউটারে বসে ‘স্ক্র্যাপ’ পাঠাচ্ছেন। মানে যাকে বলা যায় জীবন যাপনের এক আমূল পরিবর্তন। অন্য দিকে কলকাতা শহরের সাংস্কৃতিক মানচিত্রও খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে।
আধুনিক বাংলা গানে একটা যুগ বদলে দেওয়া জোয়ার আনলেন কবীর সুমন। সারা শহর জুড়ে বাজছে ‘তোমাকে চাই’, কিন্তু পরিবর্তনের ধারা চলতেই থাকলো। পুরোনো বাড়ি গুলো ভেঙ্গে কমপ্লেক্স মল এইসব তৈরি হলো। পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকান কমে গিয়ে বাড়লো কফি শপ ও নানা ধরণের রোডসাইড কাফে। আর একটা জোয়ার এলো সোশ্যাল মিডিয়ার হাত ধরে। হলদে ট্যাক্সি কমে গিয়ে বাড়লো ওলা উবের ও নানা ধরণের অনলাইন যানবাহনের সুযোগ সুবিধা। কলকাতা শহরের যে চরিত্র সেটারই পরিবর্তন হলো কয়েক বছরের মধ্যেই। এত কিছুর পর ও একটাই ক্ষেত্র বা ভাবনা যেটার পরিবর্তন হলোনা, তা হল বন্ধুত্ব ও বন্ধু বাঁধন। আমাদেরও সেইরকম গল্প একটা তৈরি হয়েছে গত কয়েক বছরে যার পরিবর্তন নেই, যার শেষ নেই।
এইতো সে দিন আমদের বন্ধুত্বের পথ চলা শুরু হলো।
হ্যাঁ!ক্যালেন্ডার হয়তো বলবে মাত্র ৬/৭ বছর।
কিন্তু মনে মনে যে আমরা কত যুগ পেরিয়ে এসেছি তার হিসেব হয়তো কোনো সূর্যোদয় সূর্যাস্তের পরিসীমা দিয়েই পরিমাপ করা যাবে না।
তাই এই পথ চলায় যা সঞ্চয় করেছি,এবার তা আর কেবল নিজেদের গান গল্প আড্ডায় আটকে রাখতে না চেয়ে – ভাবলাম এবার সত্যি সত্যি একটা কিছু করা যাক।এমন একটা কিছু , যা এই সব হারানো সময়ের তীরে ‘আমিত্ব’র ক্লান্তিতে ছায়া বুলিয়ে যাবে, আশ্রয় দেবে।
আর বলবে ‘ভাবছি ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো’ এবং সেই একই কারণে এই ওয়েব ম্যাগাজিনের পরিকল্পনা, এই ধাবমান সময়ে দাঁড়িয়ে, এই মাস হিস্টিরিয়ার যুগে, একটা স্থায়ী কিছু দরকার বলে আমাদের মনে হয়েছে, একটা সিরিয়াস সৃষ্টিশীলতার পরিবেশ খুব দরকার বলে আমাদের মনে হয়েছে তাই এই পদক্ষেপ। পাঠকদের উদ্দেশ্যে এইটুকুই বলার যে বাংলা ও বাঙালির সৃষ্টির ধারা কে যেন আমরা ভুলে না যাই, এই সময়ে দাঁড়িয়ে গভীর চিন্তা ও নানাবিধ বিষয় নিয়ে যেন আমরা কাজ করতে পারি, আপনাদের আশীর্বাদ ও শুভেচ্ছা আমাদের পাথেয় হবে। যদি ভালো লাগে আমাদের কাজ তাহলে ছড়িয়ে দেবেন এই আশা রাখবো। একবিংশ শতাব্দীর তরুণ তরুনীরা আজও দিনবদলের স্বপ্ন দেখে, কথাবৃক্ষ আমাদের অঙ্গীকার।