:১ম দৃশ্য:
[পর্দা ওঠে, মঞ্চ উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত। দরিয়াপুরের মুখার্জি বাড়ী। গ্রামের জমিদার বাড়ি, ছড়ান উঠোন, বিশাল অলিন্দ, বড় বড় থাম ঘেরা ঠাকুর দালান। সানাইয়ের সুর ভেসে আসছে। মুখুজ্জে গিন্নী কাকভোরে উঠে সবে ঠাকুর দালানে গঙ্গা জলছড়াটা দিতে যাচ্ছেন, এমন সময় দারোয়ান নটবরের নাতি পটকার প্রবেশ।]
পটকাঃ ঠাকমা… ও ব-ঠাকমা… শুনবে তো …. কইগো… আরে ও ঠাকমা…
[হাতের ঘটি থেকে কিছুটা জল পড়ে যায়।]
সুধারানীঃ কি হয়েছে কি? সকাল থেকে চিল চিৎকার জুড়েছিস? এই ষষ্ঠীর সকালে শান্তি মনে একটু ঠাকুরকে জল দেব সে উপায়ও রাখবি না? দূর করে দেব সব কটাকে। আসুক শুভ ….
পটকাঃ সে তো রোজই দিচ্ছ। এখন বাইরে এসে দেখো… শুভ কাকুর বন্ধুরা এসেছে… কি সুন্দর লাল রঙের গাড়ি গো… পুরো টিভির মতন…
সুধারানীঃ এই সাতসকালে কে আসবে? সদর দরজায় নটবর নেই? ভালোই হয়েছে.. তোর দাদু কাজে ফাঁকি দিয়ে ঝিমোচ্ছে আর তুই এসেছিস মসকরা করতে আমার সাথে? টেনে কান ছিঁড়ে ….
[দুটি অল্পবয়সী ছেলেমেয়ের প্রবেশ। মেয়েটির পরনে একটা লুঙ্গি মত কিছু, চুলটা টেনে একটা কাপড় দিয়ে ঝুঁটি বাঁধা, ছেলেটা একটা কিরকম যেন ছেঁড়া ছেঁড়া প্যান্ট পড়া। দুজনের মুখেই মাস্ক, চোখের মুগ্ধ কৌতূহলী দৃষ্টি ঘুরছে চারদিকে।]
ঈশানী (সুধারানীকে দেখে): তুমি আন্টি? ওমা কি সুন্দর দেখতে গো তোমাকে! শুভ আমাদের বন্ধু। আমরা আসব শুভ বলেনি?
সুধারানী (ঈষদ রাগ ও বিরক্তি মিশিয়ে) : না বলেনি। এসব আংটি টাংটির কি ব্যাপার? ওসব হবেনা বাপু এখানে। তোমরা আসতে পারো। শুভর বন্ধু! সহবত জানেনা, কথা বলতে জানেনা… আজ বাড়িতে পুজো শুরু… মেলা কাজ আছে…
ঈশানীঃ কি আশ্চর্য!! সহবত…
অনির্বাণঃ (হাত টেনে ঈশানীকে থামিয়ে দিয়ে): আন… সরি… মানে… মাসি, আমরা ওই পুজো দেখতেই এসেছি। শুভর কাছে অনেক শুনেছি আপনাদের বাড়ির পুজোর গল্প। আমরা একই অফিসে কাজ করি। শুভর সাথেই আসার কথা ছিল। কিন্তু ও তো এবার আসতেই পারল না। আমরা এই লকডাউনে বাড়ি আটকে গিয়ে এত বোর হয়ে গেছি যে ভাবলাম আমরাই চলে আসি। ঈশা একটা ফোন করো না শুভকে।
[এগিয়ে এসে প্রণাম করে অনির্বাণ, পেছনে ঈশানী]
সুধারানীঃ (কিছুটা নরম সুরে) থাক থাক হয়েছে। বুঝেছি। শুভ বলেছিল বটে। কিছু মনে থাকে না আজকাল। একটা ফোন করে আসলেই তো ঝামেলা মিটে যেত। তবে পুজো বাড়ি। কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা, আচার, পোশাক সব মেনে থাকতে হবে। এসব লুঙ্গি-টুঙ্গি চলবে না। সারা গ্রাম এখনও এই বাড়িকে মাথা মানে। সেই বিচার করে থাকতে যদি পারো, দেখো।
শিউলি… শিউলি… [একটি অল্পবয়সী মেয়ের প্রবেশ]
দক্ষিণের বড় ঘরটা খুলে পরিস্কার করে দে। আর পটকা, গোয়ালে মিনুর পাশের জায়গাটা দেখিয়ে দে, ওদের গাড়িটা রেখে দিক। ওদিককার কলঘরে হাত পা ধুয়ে তবে বাড়িতে উঠো।
ঈশানীঃ গোয়াল? মানে কি… অনি গোয়ালে গাড়ি? মিনু কে? [অনির হাসি চাপতে মুখ লাল]
পটকাঃ [এক লাফে সামনে, হাতে ঘুড়ি, লাটাই] আমাদের গরু গো। ৩টে ছিল, এখন একটাই। তাইতেই তো ফাঁকা গোয়াল। চল দেখিয়ে দিই। আমাকে একবার গাড়িটা চড়াবে গো?
অনির্বাণঃ চল পটকা তোদের গোয়াল দেখা আগে। গাড়ি চড়াব তোকে। আছি তো কদিন। কিন্তু তুই আমাকে ঘুড়ি ওড়াতে দিবি বল?
:২য় দৃশ্য:
[মঞ্চের একদিকে স্পটলাইটে দক্ষিণের ঘর। ঈশানী আয়নার সামনে। অনির্বাণ বসে ক্যামেরা সেট করছে]
ঈশানীঃ এই ঘরটা কিন্তু জাস্ট ব্যাপক। এইসব ফার্নিচার, কি বিশাল খাট… পালঙ্ক বলে না? আয়নাটা দেখ… রাজকুমারী টাইপ ফিলিং হচ্ছে একটা। কুঁচিটা একটু ধরে দাও না।
[অনির্বাণ উঠে কুঁচি ধরার নামে ঈশাকে কাছে টানতে চায়।]
ঈশানীঃ ইসস… না.. একদম না (ঠেলে সড়িয়ে দেয়)… ওই গোয়ালে গোবর মেখে এসেছ… যাও স্নান করতে… কি গন্ধ রে বাবা গোয়ালে… আহারে আমার সাধের আই২০! আর আমার স্কার্ট টাকে বলে লুঙ্গি! বললাম, চল দার্জিলিং যাই। কতদিন পাহাড় দেখি না.. পুরো পুজো এখন এই গরু, গোবর, শুচিবাই বাতিক মেনে কাটাতে হবে।
অনির্বাণঃ (হা হা করে হেসে ওঠে) সত্যি অ্যান্টিক গ্যারেজ পেয়েছে বটে গাড়িটা। আরে পাহাড়ে তো আমারও মন টানছে গো কিন্তু এই মুহূর্তে যাওয়াটা তো মুশকিল না? আর বলছ বটে কিন্তু ভাল লাগবে দেখ। পুরনো আচার, ঐতিহ্য তো সব ভুলতেই বসেছি আমরা।
[পটভূমি তে শব্দ। ঈশানী এগিয়ে যেতেই থতমত খেয়ে শিউলি’র প্রবেশ।]
শিউলিঃ হ্যাঁ, মানে, বড়মা ডাকছেন আপনাদের। জলখাবার তৈরি আছে।
:৩য় দৃশ্য :
[আলোকিত মঞ্চে ঠাকুরদালানের সামনে সিঁড়িতে বসে সুধারানী। অনির্বাণ ছবি তুলতে ব্যস্ত]
সুধারানীঃ থামতো বাপু। ঠাকুরের ছবি তুলছিস তোল। এই বুড়ো মানুষের ছবি আর তুলিস না। আয় বস দেখি এখানে।
অনির্বাণঃ (বসে পড়ে পাশে) কতদিন পর প্রাণভরে অষ্টমীর অঞ্জলী দিলাম মাসি।আর তোমার এই অষ্টধাতুর দুর্গা মূর্তি – কি অসাধারণ গো। কি জীবন্ত।
সুধারানীঃ এ কি আর আজকের রে। দুশো বছর হয়ে গেছে। আমার শ্বশুরমশায়ের ঠাকুরদা এ পুজো শুরু করেন। বংশ পরম্পরায় এই মূর্তিই পুজো হয়ে চলেছে। সাথে মাটির প্রতিমাও থাকে। কিন্তু এবারে এই রোগের দাপটে, তালেগোলে আর করে উঠতে পারিনি। কি জানি আমার পরে কি হবে। শুভ কি আর এসব রাখতে পারবে? শিউলির মা অর্চনাকে দেখলি তো? আমার ছোট জা। অর্চনারও বড় লোভ, হিংসে। এত জায়গা জমি, জিনিস… শিউলিটাও যেন কেমনতরো। (দীর্ঘশ্বাস)
অনির্বাণঃ না না মাসি রাখবে না কেন? এতবছরের পুরনো পুজো তোমাদের।
[চঞ্চল ভাবে ঈশানী’র প্রবেশ ও প্রস্থান। পিছন পিছন পটকা।]
সুধারানীঃ হ্যাঁ রে, তোর বউ তো এই দুদিনেই গ্রামের মেয়ে হয়ে গেছে রে! শাড়ী কোমরে গুঁজে সারাদিন খেলে বেড়াচ্ছে পটকার সাথে পাল্লা দিয়ে। (হঠাৎ কিছু চখে পড়ে) একি একি… ওই দেখ দেখি কি করে… গাছে উঠবে নাকি? ডাক বাবা ডাক ও ধিঙ্গী মেয়েকে। অভ্যাস নেই, পড়ে গিয়ে হাত পা ভাঙলে এক চিত্তির…
অনির্বাণঃ (হেসে) ও ওইরকমই গেছো মাসি… তুমি ঘাবড়িও না। (গলা তুলে) ঈশা… এই ঈশা… মাসি ডাকছে..
[ঈশানী এসে শাড়ী গুছিয়ে পাশের সিঁড়িতে বসে পড়ে। সুধারানী সস্নেহে আঁচল দিয়ে মুখটা মুছিয়ে দেন।]
সুধারানীঃ কি ছিরি করেছিস দেখেছিস একবার মুখটার? ঘেমে নেয়ে একসা…
ঈশানীঃ এখানে এসে আমার বয়স আরও কমে গেছে মাসি। কি যে মজা করছি! আর হিরো তো একজনই-পটকা। গাড়ি চড়তে পারলে আর কিছু চায় না।
অনির্বাণঃ কেন পটকা গাইড আমাদের কতকিছু দেখাল সেটা বল? বিঘের পর বিঘে সবুজ ক্ষেত, গ্রামের শেষ প্রান্তে শিবমন্দির…
ঈশানীঃ হ্যাঁ… কত পাখি, কি সুন্দর ঘন বাঁশ ঝাড়ের জঙ্গলে ঘেরা পুকুর। প্রকৃতির কত কাছে থাকেন তোমরা …না আপনারা…
সুধারানীঃ (ছদ্ম রাগে) থাক। অনেক হয়েছে। আর আপনিতে কাজ নেই। এই নে এটা দেখ তো।
(আঁচলের তলা থেকে একটি হাতে কাজ করা শাড়ী বের করে ঈশাকে দিলেন) দেখ তো পছন্দ হয় কি না।
ঈশানীঃ এটা কি অসম্ভব সুন্দর একটা শাড়ী গো! এটা তোমার?
সুধারানীঃ এটা ছিল আমার শাশুড়ির। বিয়ের পর মুখ দেখে আমায় দিয়েছিলেন। ইচ্ছে করল তোকে দিতে। নতুন কিছু কেনা নেই যে তোকে দেব।
ঈশানীঃ (প্রচন্ড প্রতিবাদ করে ঘাড় নাড়ে) না, না মাসি। এ তোমাদের বংশের এত মূল্যবান জিনিস। আমাকে কেন দিচ্ছ?
সুধারানীঃ থাক। তোমাকে আর পাকামি করতে হবে না। (একগাল হেসে) এই যে গত দুদিন ধরে, আমার এত বকা খেয়েও চুপটি করে লক্ষ্মী মেয়ের মত আমার হাতে হাতে এত পুজোর কাজ করলি ধরে নে এ তারই পুরস্কার… এটা দশমীর দিন পড়ে মাকে বরণ করিস। আর সেদিন একটু এঁয়ো স্ত্রীর মত শাঁখা সিঁদুর পড়িস বুঝলি?
[ঈশানীর চোখে জল এসে যায়। সে শাড়ীটা জড়িয়ে ধরে সুধারানীর কোলে মুখ লুকায়। সুধারানী তার মাথায় হাত বুলিয়ে কিছু বলতে যাবেন এমন সময় অর্চনা’র প্রবেশ, পেছনে শিউলি।]
অর্চনাঃ হ্যাঁ গো দিদি.. বয়স্ কালে কি ভীমরতি ধরল তোমার? চেনা নাই, জানা নাই, কে এসে শুভর নাম করল আর কদিন ধরে তাদের নিয়ে তোমার আদিখ্যেতার শেষ নেই। কোন জাত বেজাতের মেয়ে, তাকে দিয়ে পুজোর কাজ করাচ্ছ। কিচ্ছু বলিনি। কিন্তু তাই বলে এটা? বংশের শাড়ী বের করে দিয়ে দিচ্ছ? দুদিনের আলাপ যার সাথে? ভাগ্যিস শিউলি বলল, জানতেই পারতাম না নাহলে! কোথায়, আমার শিউলিকে তো প্রাণে ধরে কিছু দাওনি কখনও? বংশের শাড়ীর ওপর তো ওরও অধিকার আছে। আজ তোমার দেওর এ বাড়িতে থাকলে পারতে আমাদের এরকম দূরছাই করতে?
সুধারানীঃ (চোয়াল শক্ত করে) আমার শাড়ী আমি কাকে দেব তা সম্পূর্ণ আমার সিদ্ধান্ত। বাইরের লোকের সামনে নিজের লোভী চেহারাটা আর দেখিওনা। ঘরে যাও।
:৪র্থ দৃশ্য:
[মঞ্চের কোণে স্পটলাইটে দক্ষিণের ঘর। সেই শাড়ীটা হাতে নিয়ে ঈশানী চুপ করে বসে আছে আয়নার দিকে তাকিয়ে। অনির্বাণের প্রবেশ।]
অনির্বাণঃ কি গো… দশমী পুজো শেষ তো। তৈরি হওনি এখনও? মাসি বার বার জিজ্ঞেস করছেন যে তোমার কথা।
ঈশানীঃ (চোখ ফেরায় অনির্বাণের দিকে। দুচোখে টলটল করছে জল) আমরা মাসিকে ঠকাচ্ছি না তো অনি?
অনির্বাণঃ মানে? কি বলছ কি? ঠকাচ্ছি?
ঈশানীঃ মাসি কিছু জানেন না অনি… তোমার মনে হয় না মাসিকে জানান উচিত ছিল? উনি আমাকে বরণ করতে বলছেন। এঁয়ো স্ত্রী, শাখা, সিঁদুর… কি করে অনি? তোমার সাথে আমার সম্পর্কটা …
অনির্বাণঃ সম্পর্ক? তুমি বলছ সম্পর্ক নিয়ে? এইসব নিয়ে তো মাথা ঘামাওনি কখনও? বরণ করতে এত দ্বিধা কেন ঈশা? কেন আজ হঠাৎ বাইরের অনুষঙ্গগুলি এত দামী হয়ে গেল তোমার কাছে? আমরা তো দুজনের সমান সিদ্ধান্তেই বিয়ে নামক ইন্সটিটিউশনটাকে অস্বীকার করেছিলাম। তবে?
ঈশানীঃ আমার আজও কোনও দ্বিধা নেই অনি। আজও আমার কাছে এই লোক দেখানো চিহ্নগুলি ম্যাটার করে না। কিন্তু মাসির কাছে তো করে। আমরা সেই মানুষটার বিশ্বাসে কোথাও আঘাত করছি না তো? আমি এইজন্যই বলেছিলাম প্রথমেই বলে দিই যে আমরা স্বামী-স্ত্রী নই।
অনির্বাণঃ মাসি কখনই বুঝতে পারতেন না ঈশা। ছাড়, আর তো একটা দিন। বুড়ো মানুষটাকে আর শক দিয়ে লাভ নেই। রেডী হয়ে নাও ঈশা, গিয়ে মন থেকে বরণটা করে এস। তুমি যদি চাও কাল বেরনোর আগে আমি চেষ্টা করব মাসিকে সবটা বুঝিয়ে বলার।
[অনির্বাণ বেরনোর আগেই মঞ্চের পাশ থেকে সরে যায় শিউলি।]
:৫ম দৃশ্য:
[ঠাকুরদালান। সুধারানী থমথমে মুখে বসে। সামনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অর্চনা। শিউলি থামের গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে। ঈশানী ধীরে ধীরে প্রবেশ করে মঞ্চে। আটপৌরে ভাবে শাড়ীটা পড়েছে ও, চুলগুলি টেনে খোপায় বাঁধা, ফুল লাগান তাতে। পিছনে অনির্বাণ]
অর্চনাঃ এই যে এলেন ওনারা। কি দিদি.. বলেছিলাম তো তোমাকে বাইরের লোক কখনও নিজের হয়না.. শুনলে আমার কথা? এত আদর, যত্ন.. নিজের ঘরের জিনিস উজাড় করে দিচ্ছ.. বোঝ এখন? রাখল তোমার মান তারা? তোমাকে ঠকিয়ে, তোমার নাকের ডগা দিয়ে এতবড় অনাচার করে চলেছে.. ছি ছি ছি.. তুমি ভাবতে পারছ গ্রামের লোক জানলে কি হবে? মান থাকবে তোমার? দুটো সমত্থ ছেলেমেয়ে.. বিয়ে না করে.. ছি ছি কি বেলেল্লাপনা বাপু…
সুধারানীঃ থাম অর্চনা। যা বলার আমি বলছি।
[সুধারানী ওদের দিকে তাকালেন। দুজনেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে]
কিছু বলবে তোমরা? এভাবে ঠকালে আমাকে?
ঈশানীঃ না মাসি…এরকম নয় গো..
অনির্বাণঃ আমি বলছি। আমরা কোনভাবে তোমাকে ঠকাইনি মাসি। আমি আর ঈশা এখনও বিয়ে করিনি মাসি… একথা সত্যি… কারণ আমরা বিশ্বাস করি নিজেদের মনের বন্ধনের থেকে কোনও বন্ধন বেশী বড় হতে পারে না। আর সেই বন্ধন যদি আলগা হয়ে যায় কোনও বিয়ের মন্ত্র, সিঁদুর কি তাকে বাঁচাতে পারে? সে বিয়ের কি মানে মাসি? যেকোনো প্রচলিত স্বামী-স্ত্রীর থেকে আমরা কোথায় আলাদা, বলতে পারো? আর যে স্বামী-স্ত্রী নিজেদের বিয়ে রেখে বাইরে যা খুশি করে বেড়াচ্ছে? সেটা? কোনটা অনাচার মাসি?
সুধারানীঃ তাই বলে এভাবে লুকিয়ে গেলি ঈশা..
অনির্বাণঃ না না মাসি.. ঈশা আমাকে বলেছিল তোমাকে বলতে। আমিই আমল দিইনি বিশেষ। আমারি ভুল… আসলে এটা যে এইভাবে তোমার সামনে কেউ দেখাবে বুঝিনি গো… ব্যাপারটা আমার কাছে এতটাই স্বাভাবিক… ঈশাকে তো আমি অন্য কিছু ভাবিইনি কোনদিন। শুধু অনুষ্ঠান করে ঘোষণা করলেই বুঝি বিবাহিত হওয়া যায়? আমরা যে কবে কিভাবে একসাথে থাকতে শুরু করলাম তাও বলতে পারিনা..
অর্চনাঃ দিদি তুমি একদম ওদের এই মিষ্টি কথায়..
সুধারানীঃ (হাত তুলে থামিয়ে দেন) উফফ থামো তো বাপু। দোষ, গুণ, কে দোষী, কে সাধু, সব আজকাল গুলিয়ে যায়। বিয়ের আচার মেনে যে এতগুলি বছর কাটিয়ে দিলে, আজ ১২ বছর তোমার স্বামীর হদিশ জানো না, এই বিয়েরই বা মানে কি? আমার শ্বশুরমশাইকে দেখেছি শ্বাশুড়ী থাকতেই বারনারীর কাছে যেতে। সে যদি দোষের না হয় তবে ওরাও কিভাবে দোষী হয়? শিউলি, এর ওর ঘরে উঁকি মারা, আড়ি পাতা বাদ দিয়েও আরও কাজ আছে পুজোর। যাও বরণের আয়োজন কর।
ঈশানী… (এগিয়ে গিয়ে ঈশানীর হাত ধরেন সুধারানী) মা দুগগার আরেক নাম.. যা মা, তুই আজ প্রথম বরণ কর দেখি..
[ঈশানী, অনির্বাণ দুজনের চোখেই জল। আবহে দশমী পুজোর ঢাক বেজে উঠেছে। পটকা এসে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় দুজনকে। আজ সবাই মিলে নাচ হবে ঢাকের তালে। ঢাকের তালে নৃত্যের দৃশ্যের উপর দিয়েই আলো নিভে আসে। যবনিকা পতন। সকলের প্রস্থান।]
সমাপ্ত
Srabanti Sen is a co-editor of Kothabriksha web magazine.
প্রচ্ছদ – রাহুল সরকার
All rights reserved © Kothabrikha 2020