সোনার দুর্গা মন্দির – বেহালা | কথাবৃক্ষ শারদীয়া সংখ্যা, ২০২১

কথাবৃক্ষের পক্ষ থেকে আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম বেহালার অতি প্রাচীন সোনার দুর্গা মন্দিরে।

বেহালা কলকাতার এক অতি প্রাচীন এলাকা। প্রসঙ্গত, তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কলকাতা, সুতানুটি ও গোবিন্দপুর যে তিনটি গ্রাম ইজারা নিয়েছিল, তার জমিদার সাবর্ণ রায় চৌধুরী দের বাড়ি এই বেহালা-বড়িশা অঞ্চলে।

সেখানকারই ব্রাহ্মসমাজ রোডে অবস্থিত মুখোপাধ্যায় পরিবার এবং তাঁদের বাড়ির দুর্গা মন্দির এর সঙ্গে ইতিহাসের অনেকটাই জড়িয়ে আছে। এই বংশের পূর্বপুরুষ দ্বাদশ শতকে কনৌজ থেকে বাংলায় চলে আসেন। মধ্যযুগের বাংলা কবি কৃত্তিবাস ওঝা এই পরিবারের একজন পূর্বপুরুষ।

প্রসঙ্গত, মহাকবি কৃত্তিবাস ওঝা প্রণীত রামায়ণের বাংলা অনুবাদ ‘শ্রী রাম পাঁচালী’ তে রামচন্দ্র কর্তৃক শারদীয়া দুর্গোৎসবের কথা উল্লেখ রয়েছে, যা কিনা মহর্ষি বাল্মীকি রচিত রামায়ণে নেই।

তাঁদের ২৪ তম পুরুষ জগতরাম, যিনি প্রথম বেহালায় বাস করতে শুরু করেন, তাঁর মেয়ে জগত্তারিণী কোনো বার এক পুজোয় অষ্টমীর দিন তাঁর বাবার কাছে দুর্গাপুজোর আবদার করেন। কিন্তু অষ্টমীর দিন নতুন করে পুজোর আয়োজন সম্ভব নয়, তাই সেবার ঘটে পুজো হয়েছিল। তারপর পটেও কিছুকাল পুজো হয়েছে। তারপর জগতরামের ছেলে ভবানীশঙ্কর এর আমলে এই সোনার দুর্গামূর্তি স্থাপিত হয়।

শারদীয়া দুর্গাপূজা এই মন্দিরের মূল উৎসব। দেবীকে রাজবেশে সাজানো হয় পঞ্চমীর দিন, যা থাকে লক্ষ্মীপুজো অবধি। তারপর ষষ্ঠীতে বোধন কল্পারম্ভ শুরু করে চারদিন ষোড়শ উপচারে পূজা হয়।

এখানকার দেবীমূর্তির বৈশিষ্ট্য হল, এখানে দেবী জয়া-বিজয়া বেষ্টিতা। পুরোনো জয়া-বিজয়া ৫০ বছর আগে চুরি হয়ে যায়, কিন্তু কিছুদিন আগে নতুন জয়া বিজয়া মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

অষ্টমীর দিন কুমারী পুজো হয় না এখানে, হয় সাধবা পুজো। নবমীর দিন ছাগ-বলি হয়। দশমীর দিন বিশেষ শঙ্খ দিয়ে দেবীকে প্রদক্ষিণ করা হয়। সেদিন শুধু ঘট আর নবপত্রিকার বিসর্জন হয়।

এই মন্দিরে কালীপুজো-র একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কালীপুজোর দিন সন্ধ্যা নামলে দুর্গামূর্তি সরিয়ে পার্শ্বস্থ শিব মন্দিরে রাখা হয়, আর দুর্গা সিংহাসনে এলকেশী কালীমূর্তি স্থাপন করে পুজো হয়, যা সেদিন রাতেই পুজো করে বিসর্জন দিয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই দেবী দুর্গা তাঁর আসনে ফিরে আসেন।

বর্তমানে এই বংশের ৩২ তম পুরুষ চলছে। এই বংশের ৩১ তম পুরুষ শ্রী ইন্দ্রজিৎ মুখোপাধ্যায় বর্তমানে মন্দিরের কাজ পরিচালনা করেন।

Copyright © Kothabriksha 2021, All Rights Reserved

Ambika Ghosh benaras Bengal Bengali Poetry bengali short story coronavirus Dakshinee dreams Durga Puja Emotions folk culture Himalaya India indian politics Kashmir Kobita kolkata kothabriksha kothabriksha editorial lockdown Music Nature nilimesh ray Poetry Pratyay Pratyay Raha pritam chowdhury pujo shonkhya Rabindranath Rabindranath Tagore Rabindrasangeet Religion Sayandeep Paul sharodiya shonkhya shortstory society Srabanti Sen Stories Subha Guha Thakurta Sustainable Travel Suvo Guha Thakurta Theatre travel west bengal World Environment Day

Leave a comment

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.